শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা
উপজেলা নির্বাচন

অস্বস্তিতে ইসি, দোষ ঘোচাতে তদন্ত

সদ্য সমাপ্ত পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় হস্তক্ষেপ, কারচুপি, সংঘাত-সহিংসতা নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হলেও উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি ঠেকাতে না পারায় কমিশন অনেকটাই বিব্রত। এ পরিস্থিতিতে দোষ ঘোচাতে নামেমাত্র নির্বাচনী অনিয়ম তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর অনিয়মে জড়িত রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরই আবার এই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তদন্ত কতটুকু সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ইসির কর্মকর্তারাই।

জানা গেছে, সিটি নির্বাচনের অর্জন বিলীন হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার। এমনকি অনিয়মের বিষয়ে একেকজন একেক ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাচনে ঠিকঠাকভাবে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সমন্বয়হীনতা, ব্যাপক সহিংসতার ঘটনাসহ নানা কারণেই ইমেজ সংকটে পড়েছে ইসি। ব্যালটবাঙ্ ছিনতাই, জাল ভোট, সংঘাত-সহিংসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও বর্তমান কমিশন তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে ৬৫ কেন্দ্র, দ্বিতীয় ধাপে ১০০ কেন্দ্র, তৃতীয় ধাপে ২০০ কেন্দ্র, চতুর্থ ধাপে চার শতাধিক ও পঞ্চম ধাপে পাঁচ শতাধিক কেন্দ্রে দখল ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও শেষ ধাপে ব্যালটে সিল মেরেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় ১২ জন মারা গেছেন।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'কারা অনিয়ম করেছে, এটা সবাই জানে। ভোটকেন্দ্রে কারচুপি করেছে প্রশাসনের লোক। কিন্তু ইসি তাদের ছাড়া তো নির্বাচন করতে পারবে না। আর ইসির এত কর্মকর্তাও নেই যে শুধু তাদের দিয়ে নির্বাচন করা যাবে।' তিনি বলেন, 'সরকারে উচ্চ পর্যায়ের একজন উপদেষ্টা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু এখানে ইসির করার কিছুই নেই।' উপজেলা নির্বাচনে 'বেড়ায় খেত খেয়েছে' বলে মন্তব্য করেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি আরও বলেন, 'আমরা সংবাদ পাই অনিয়মের কিন্তু কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কিছুই হয়নি। আমরা কার ওপর ভরসা করব?'

অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন আরেক নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ। তিনি বলেন, 'কোনো কোনো এলাকায় কিছু অনিয়ম হয়েছে। আমরা তদন্তের জন্য বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' শাহ নেওয়াজ বলেন, 'রাজনৈতিক দলের উসকানি ও প্রার্থীদের পেশিশক্তির প্রদর্শনের কারণেই সহিংসতা হয়েছে। সব বড় নির্বাচনেই ছোটখাটো সহিংসতা হয়। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা গায়ের জোর দেখিয়েছেন বলেই সহিংসতা হয়েছে। আমরা অতিমানব নই যে, সহিংসতার বিষয় আগেই জেনে যাব।'

মাঠপর্যায়ে অনিয়মের জন্য বরাবরই মাঠ কর্মকর্তাদের দুষেছে কমিশন। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, ধাপে ধাপে ভোটের সময় পত্রিকায় অনিয়মের সংবাদ এসেছে। বিভিন্ন জেলার ৭০টিরও বেশি পত্রিকার প্রতিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তদন্ত করে জানানোর জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনিয়মের দায় নিতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, 'ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে আমার (সিইসির) উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলেনি।' তবে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বললেন অন্য কথা। কারচুপির বিষয়ে তিনি তিনটি কারণকে দায়ী করে বলেন, 'নির্দলীয় নির্বাচনকে দলীয় রুপদান, রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতা ও ধাপে ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষে ফলাফল প্রকাশের কারণেই সহিংসতা বেড়েছে।'

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর