খায়েস ছিল তার সন্ন্যাসী হওয়ার। এর আগে ১০১ জন নারীকে ধর্ষণের পর খুন করার প্রতিজ্ঞা। এমন বর্বর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কুৎসিত ইচ্ছা নিয়ে নেমে পড়েন নৃশংস কিলিং মিশনে। মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে একে একে খুন করেন ১১ জন নারীকে। একজন ছাড়া সবাইকে তিনি খুনের আগে ধর্ষণ করেন। প্রত্যেককেই রাতের বেলায় খালের কিনারে নিয়ে খুন করেন এবং লাশ ফেলে আসেন সেই খালের ধারেই।
এটা বিদেশি কোনো সিরিয়াল কিলারের গল্প নয়। বিকৃত মানসিকতার ভয়ঙ্কর এই খুনির নাম রসু খাঁ। রসু খাঁ এখন দেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় এক সিরিয়াল কিলারের নাম। তার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামে। নরপিশাচ রসু খাঁ জেলখানায় বন্দী। বীভৎস সেসব খুনের ঘটনায় তিনি এখন বিচারের মুখোমুখি। চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুণাভ চক্রবর্তী গতকাল একটি হত্যা মামলায় ‘আত্মস্বীকৃত সিরিয়াল কিলার’ রসু খাঁর ফাঁসির রায় দিয়েছেন। সাত বছর আগের ওই ঘটনার এ রায় ঘোষণার সময় রসু খাঁ কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। তবে তার ছিল না কোনো বিকার। হাতকড়া পরিয়ে যখন তাকে আদালতে নেওয়া হচ্ছিল, তখনো তার ঠোঁটে ছিল জ্বলন্ত সিগারেট। ঘটনার শুরু : ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের জুলাই। এই সময়ের মধ্যে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ছয়টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশগুলোর সবই থেকে যাচ্ছিল অজ্ঞাতনামা। লক্ষ্য করার বিষয়, সব লাশই নারীর। ধর্ষণের পর কে বা কারা তাদের খুন করে ফেলে রাখছে। খালে, বিলে, নদীতে মিলছে লাশ। কিন্তু ঘটনার কোনো হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ। খুনের আলামত খুঁজে পেতে যখন দিশাহারা পুলিশ, তখন নিরাপদে খুন করে বেড়াচ্ছিলেন কেউ। এই যখন অবস্থা তখন একটি ফ্যান চুরির মামলা খুলে দেয় হত্যারহস্য উম্মোচনের পথ। ধরা পড়েন সেই খুনি চাঁদপুরের নরপিশাচ রসু খাঁ। শুধু ফরিদগঞ্জের এ ছয়টিই নয়, রোমাঞ্চকর গল্পের চরিত্রের মতো ১১ নারীকে খুন করে নিরাপদে পালিয়ে ছিলেন রসু খাঁ। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ১০১ নারীকে খুন করার শপথ নেওয়ার কথা। যেভাবে খুনির সন্ধান : ২০০৯ সালে ফরিদগঞ্জ থানায় চাকরি করতেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই বছর ২১ জুলাই ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ইতলী গ্রামে একটি খালপাড় থেকে পারভিন নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই নারীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। তার শরীর ও যৌনাঙ্গে ছিল সিগারেটের ছ্যাঁকা। মুখের ভিতরে শাড়ির অংশ ঢোকানো ছিল। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিকে হত্যাকাণ্ডটি ছিল সূত্রবিহীন। পুলিশ কোনোভাবেই বুঝতে পারছিল না কারা কী উদ্দেশ্যে ওই নারীকে খুন করেছে। কিন্তু পুলিশের সূত্র মিলে যায় একটি মোবাইল ফোনকল থেকে। ওই ঘটনার পর দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নম্বরে এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানান, ঘটনার দিন তিনি ওই নারীকে বাসস্ট্যান্ড থেকে বহন করে এনেছিলেন। গ্রামের দুই যুবকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই যুবকরা হাসা গ্রামের বিলের পাশে ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, গ্রামের ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পুলিশ নিশ্চিত হয়, ওই দুই যুবক ঘটনায় জড়িত নন। এরপর পুলিশের নজর পড়ে সেই মোবাইল ফোন নম্বরটির ওপর। কিন্তু পর দিন থেকে ফোনটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশ ফোন নম্বরটি খোঁজ করতে এক নারী সোর্সকে কাজে লাগায়। পরে ওই নারী পুলিশকে খবর দেয়, এক মাস পর ফোনটি খোলা হয়েছে। ওই ফোন নম্বরে ফোন করে পুলিশ জানতে পারে, ফোনটি চাঁদপুরের গাজীপুর বাজারের আখ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কেনা হয়েছে। পুলিশ আখ ব্যবসায়ী তাজুকে আটক করলে তিনি জানান, ২ আগস্ট রসু খাঁ ও মিজান নামের দুই ব্যক্তি তাদের মসজিদ থেকে ফ্যান চুরি করতে গেলে তিনি ও নৈশপ্রহরী মিলে তাদের দুজনকে হাতেনাতে আটক করেন। তখন তিনি রসু খাঁর কাছ থেকে সিমটি কেড়ে নিয়েছিলেন। পরে তিনি সেটি ১০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। পুলিশ নিশ্চিত হয়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রথম ফোনটি করেছিলেন রসু নিজেই। রসু গ্রেফতার : তাজুর দেওয়া সূত্র অনুযায়ী টঙ্গীর মিরাশপাড়া থেকে ৭ অক্টোবর রাতে পুলিশ রসুকে গ্রেফতার করে। প্রথম দিকে রসু কোনো তথ্য দেননি। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলে রসু খাঁ পুলিশকে গালমন্দ করতে থাকেন এবং পাগলের অভিনয় শুরু করেন। এরপর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। এ অবস্থায় রসু স্ত্রীর সঙ্গে হাজতে এক রাত কাটানোর প্রস্তাব দেন। পুলিশ জেরা অব্যাহত রাখলে একপর্যায়ে তিনি পারভিন নামের নারীটিকে খুনের কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে আরও নিবিড়ভাবে জেরা করা হলে তিনি একে একে চাঁদপুরে ১১টি খুনের কথা স্বীকার করেন। এরপর আদালতে নেওয়া হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পিশাচ জীবনের কথা : রসু পুলিশি জেরায় বলেছেন, বিয়ের আগে তিনি একটি মেয়েকে ভালোবাসতেন। এ ঘটনার জেরে তার ভাইয়েরা মেরে রসুর হাত ভেঙে দেন। এরপরই তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। একে একে খুন করতে থাকেন। তিনি পুলিশকে জানান, ‘আমি আমার অপমানের প্রতিশোধ নিতে খুন করি। ১০১ খুনের পর আর খুন করতাম না। আমি সন্ন্যাসী হতাম। মাজারে মাজারে ঘুরতাম।’ পুলিশ তার কাছ থেকে জানতে পেরেছে, নানা কৌশলে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তাদের নিয়ে অভিসারে যাওয়ার কথা বলে একের পর এক হত্যা করতেন রসু খাঁ। শুধু খুনেই এই নরপিশাচের প্রতিহিংসার সমাপ্তি ঘটেনি, খুনের আগে ওই নারীদের ধর্ষণও করেন। রসু খাঁর পিশাচ জীবনের শুরু ২০০৭ সালের প্রথম দিকে শ্যালক মান্নানের স্ত্রী রিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। সেই রিনার বাড়ি ছিল হাতিয়ায়। মিথ্যা বলে ফরিদগঞ্জের ভাটিয়ালপুরে এনে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ফেলে দেওয়া হয় তাকে। এরপর রসু খাঁ একে একে চালান আরও ১০টি হত্যাযজ্ঞ। যাদের খুন করা হয় তারা ১৭ থেকে ৩৫ বছরের রমণী।
সিরিজ খুনে রসু : চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় নরপিশাচ রসু জবানবন্দি দেন। এতে ফরিদগঞ্জে সংঘটিত সব খুনের বর্ণনা দেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ জুলাই ফরিদগঞ্জের হাসা গ্রামের একটি খালপাড়ে রসু ও তার ভাগ্নে জহিরুল মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে খুন করেন পারভিন নামের এক নারীকে। এর আগে ২০০৭ সালে ফরিদগঞ্জের ভাটিয়ালপুরে শহিদা নামে আরেক নারীকে ধর্ষণের পর খুন করেন রসু। একই বছর ফরিদগঞ্জের প্রত্যাশী এলাকায় বন্ধু মানিকের প্রেমিকা আঙ্গুর বেগম বন্ধুর সঙ্গে প্রতারণা করায় ফরিদগঞ্জে এনে খুন করেন রসু। ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীতে ভাড়া থাকার সময় পাশের ভাড়াটিয়ার ছোট ভাই শাহিনের সঙ্গে এক মেয়ে প্রতারণা করায় তাকেও ফরিদগঞ্জের হাসা গ্রামে নিয়ে ধর্ষণের পর পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন রসু। ২০০৭ সালে ওই গ্রামের হোসনে আরা নামের একজন এবং একই বছর বালিথুবায় বিআর খালে পলাশ নামে আরেক নারীকে যৌন নির্যাতনের পর হত্যা করেন রসু। ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জের নানুপুর খালপাড়ে নিয়ে ধর্ষণ শেষে খুন করেন ফরিদপুুরের শহিদাকে। ওই বছর ২৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে এনে খুন করেন কুমিল্লার কোহিনূরকে। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ উপজেলার দুর্গাদি গ্রামে এনে খুন করা হয় রংপুরের মেয়ে মেহেদীকে। রসুর হাতে খুন হওয়া নারীদের লাশগুলো উদ্ধারের পর পুলিশ অজ্ঞাত বলে চিহ্নিত করলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে মামলা হয়। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ থানায় ছয়টি, চাঁদপুর সদর থানায় চারটি ও হাইমচর থানায় একটি। কারাগারেও ভয়ঙ্কর : কারাগারেও রসু ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতেন। বিনা কারণে সাধারণ কয়েদিদের মেরে ফেলার হুমকি দেন। চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম কারাগারে থাকার সময় তার হাতে অনেক বন্দীই মারধরের শিকার হয়েছেন। দুই বোনকে বিয়ে : পুলিশ জানায়, রসু বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি সব মেয়েকে একই কায়দায় যৌন নির্যাতন করতেন। তিনি স্ত্রীর আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী মণির এক চোখ অন্ধ ছিল। এরপর তিনি স্ত্রীর ছোট বোন রীনা বেগমকে বিয়ে করেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার আর ছাড়াছাড়ি হয়নি। তবে রীনা পুলিশকে জানান, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় রসু রাস্তা থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এ নিয়ে গ্রামে শালিসও হয়।
শিরোনাম
- গাজায় সহিংসতা অব্যাহত থাকলে হামাসকে হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
- প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সিইপিজেডের আগুন, ধসে গেছে ভবনের ছাদ
- সংসদ ভবন এলাকায় সব ধরনের ড্রোন ওড়ানো নিষেধ
- ট্রাম্প-পুতিনের দীর্ঘ ফোনালাপ, হাঙ্গেরিতে বৈঠকের ঘোষণা
- কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লাশ দেখতে গিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত ৪
- স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বল ‘আফগান তালেবানের কোর্টে’: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
- যুক্তরাজ্যে অভিবাসনে ভাষাগত দক্ষতার নতুন নিয়ম
- নির্বাচনের প্রস্তুতি : ছুটির দিনেও ইসি কর্মকর্তাদের অফিস করার নির্দেশ
- জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এনসিপির
- নেত্রকোনায় প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু, স্ত্রী গ্রেফতার
- টাঙ্গাইলে পিকআপ ভ্যান-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে নিহত ২
- ধর্ম অবমাননা কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষের ফল
- ভালো নির্বাচনের পথে যত বাধা
- যেভাবে মিলবে একীভূত পাঁচ ব্যাংকের আমানত
- লাখো মানুষের হাতে মশাল, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে উত্তাল উত্তরাঞ্চল
- চাকসুতে বিজয়ীদের সংবর্ধনা দিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক
- বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে ইরাক
- জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
- জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানাল ঐকমত্য কমিশন
- এআই দিয়ে কিভাবে দ্রুত ও প্রফেশনালি সিভি বানাবেন
যেভাবে সিরিয়াল কিলার
ইচ্ছে ছিল ১০১ নারী খুনের পর সন্ন্যাসী হবেন
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লাশ দেখতে গিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত ৪
১ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বল ‘আফগান তালেবানের কোর্টে’: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

সিআইএকে অভিযানের অনুমতি দিলেন ট্রাম্প, ভেনেজুয়েলায় সরাসরি মার্কিন হামলা?
২২ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

লাখো মানুষের হাতে মশাল, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে উত্তাল উত্তরাঞ্চল
৯ ঘণ্টা আগে | দেশগ্রাম

শতাব্দীর সেরা ডিভোর্সে ১ বিলিয়ন ডলার থেকে মুক্তি পেলেন দ. কোরিয়ার ধনকুবের
১৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম