লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী ২৫ জুন থেকে তাকে তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান পদে নিয়োগ দিয়ে গতকাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তিনি ২৬ জুন নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ২৫ জুন বর্তমান সেনাপ্রধান অবসরে যাবেন। সেদিন বিকাল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি নিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাবেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ ১৯৬১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মরহুম আবদুল ওয়াদুদ এবং মাতা-রেনুজা বেগম। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর তৎকালীন মহাপরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে নিয়োজিত হন। এর আগে ২০১২ সালের ৭ মে তিনি মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং একই বছর ৫ ডিসেম্বর বিজিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। তার সময়েই বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে সীমান্ত ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ ৮ম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে পাসিং আউটের পর সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন পান। আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন চৌকস অফিসার যিনি আর্টিলারি অফিসার্স বেসিক কোর্সসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোর্সে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্টিলারি ব্রিগেডের জিএসও-৩ (অপারেশন), একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর (বিএম), সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদফতরের গ্রেড-২ স্টাফ এবং সেনাসদর, বেতন ও ভাতা পরিদফতরের গ্রেড-১ স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে এবং স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (এসএমআই)-এ প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে একটি আর্টিলারি ইউনিটের অধিনায়ক, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, একটি বিজিবি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডসহ দুটি আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে কমান্ড সম্পন্ন করেছেন। তিনি মহাপরিচালক বিজিবি ছাড়াও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্টডক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। আজিজ আহমেদ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ (পাস), ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার অব ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস), ২০০৮ সালে এমএসসি (টেকনিক্যাল) এবং ২০০৮ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) সম্পন্ন করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ ১৯৮৯-১৯৯০ সালে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল, হালিশহর, চট্টগ্রাম হতে অফিসার্স গানারী স্টাফ কোর্স এবং ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ভারতের স্কুল অব আর্টিলারি, দেওলালী হতে লং গানারী স্টাফ কোর্স (ফিল্ড) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে আর্মি স্টাফ কোর্স-১৯ সম্পন্ন করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে ইরাক-কুয়েতে সামরিক পর্যবেক্ষক এবং ২০০৫-২০০৬ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর স্ত্রী বেগম দিলশাদ নাহার আজিজ একজন গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক। খেলাধুলা প্রিয় জেনারেল আজিজ গলফে বিশেষ উৎসাহী। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন।
