সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সুবিধা দিলেও পাচার অর্থ ফেরত আসবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুবিধা দিলেও পাচার অর্থ ফেরত আসবে না

অর্থ পাচারকারীদের সুবিধা দিলেও দেশে পাচারের টাকা ফেরত আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। রাজধানীতে বাজেট সংক্রান্ত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের অর্ধেকের বেশি ব্যবসায়ী হওয়ায় আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট হয়েছে ধনীশ্রেণিবান্ধব। এ বাজেটের মাধ্যমে অনৈতিকতা, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। গতকাল ব্র্যাক সেন্টারে ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে?’ শীর্ষক এ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচারকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে বাজেটে সংবিধানবিরোধী অবস্থানকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ফলে বৈষম্য বাড়বে এবং আইনের শাসন নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, তা  হলো সরকার কি অর্থ পাচার আইন বাতিল করে দিল? তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকার একদিকে দেশে যেমন সমালোচনার মুখে পড়ছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়বে। কারণ বাংলাদেশ অর্থপাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে যেভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাচারের টাকা ফেরত আনা হয়েছে সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পরামর্শ দেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিত্বহীন।

 অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও মধ্যবিত্তের অভিভাবক নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, গত এক দশকে গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে। উপরন্তু, মধ্যবিত্তরা কর ফাঁকি দেয় বলে অর্থমন্ত্রী অভিহিত করেছেন। অথচ এ শ্রেণির মানুষের মেধা ও যোগ্যতাকে কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের প্রতি কতটা সুবিচার করা হচ্ছে তার আলোচনা এ বাজেটে নেই।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো আরও বলেন, মধ্যবিত্তরা যেসব জিনিস ব্যবহার করে যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ও রেফ্রিজারেটর- সেগুলোর কর বাড়ানো হয়েছে। দেশের উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে এ ধরনের শুল্ক সুরক্ষা দেওয়া হলে ব্যবহারকারী মধ্যবিত্তকেও অন্যভাবে সুবিধা দেওয়া উচিত ছিল। বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হলেও এর বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জে। সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ও বাজেটের আকারের তুলনায় কমেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত বরাদ্দ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পুরো দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ল। তাদের কোনো বরাদ্দ বাড়ল না। এ মানুষগুলোর অপরাধ কী? হয় মাথাপিছু আয় বাড়েনি, নয়তো এ মানুষগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে খুবই সামান্য। এ ছাড়া সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাগরিক প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফের সঞ্চালনায় আরও আলোচনা করেন সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশের পরিচালক প্রোগ্রাম ডেভেলপম্যান্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি রিফাত বিন সাত্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সংস্থা প্রধান তাসলিমা আখতার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ এবং অভিযানের নির্বাহী পরিচালক বনানী বিশ্বাস। 

সর্বশেষ খবর