সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

টেকনাফের ইউএনওর ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের টেকনাফে উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরুর ভাষা ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাই কোর্ট। আদালত বলেছেন, একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর। কোনো ‘রং হেডেড’ ব্যক্তি ছাড়া এ ধরনের ভাষা কেউ ব্যবহার করতে পারেন না।

এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। পরে এ ঘটনায় ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতে এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা কোনো ভুল করলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে, আইন আছে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশ নিয়ে ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা খুবই অবজেকশনেবল ও অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি একজন মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন। আদালত বলেন, যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। রং হেডেড পারসন ছাড়া কেউ এভাবে বলতে পারেন না। তিনি একজন মাস্তানের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন। দেখা যাচ্ছে, ইউএনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর অর্থ তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন। সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে আদালত বলেন, তারা অপরাধ করলে আইন আছে, প্রেস কাউন্সিল আছে। তবে কেউ এভাবে গালিগালাজ করতে পারেন না। আইন নিজের হাতে তুলেও নিতে পারেন না।

ঘর উপহার দেওয়ার বিষয়ে আদালত বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ কার্যক্রম প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন (ইউএনও), তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের টেকনাফ প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে গালাগালি করেন। পরে জেলা প্রশাসকের বৈঠকে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। গালমন্দ করার অভিযোগের সত্যতা এবং সত্য হলে ইউএনওর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা মৌখিকভাবে জানাতে বলেছেন আদালত। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার তার অফিশিয়াল মোবাইল ফোন থেকে কল করেন সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে। এ সময় সংবাদ প্রকাশের কারণ জানতে চেয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। তার ফোনকলের রেকর্ড করা অডিও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ইউএনও নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরদিন শুক্রবার বিকালে শহরের হিলডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে বৈঠক হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর