বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফল নির্ধারণ করবেন তরুণ ভোটাররা

গোলাম রাব্বানী

ফল নির্ধারণ করবেন তরুণ ভোটাররা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মূল প্রভাব ফেলবে তরুণ ভোটাররাই। ২০০৯ সালে যে শিশুর বয়স ছিল আট বছর, এখন তার বয়স ২১ বছর। এ ভোটাররাই আগামী নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবেন বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন কমিশনের হিসাবমতে, দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। যার সংখ্যা ২ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬১। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ তরুণ এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। যারা দেশের মোট ভোটারের ৪ ভাগের   ১ ভাগ। এ কারণে তারাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে গত ১৪ বছরে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার ৮১৫ জন তথা ৩২.৭৭ শতাংশ; তাদের বয়স এখন ১৮ থেকে ৩৩ বছরের মধ্যে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত খসড়া হিসাবে দেশে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮১৮। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী ৬৬,৩৮,৫৬৬ জন। ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সী ১,০৮,০৭,৮৬১ জন। ২৬ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১,০৭,০৭,৫৩৪ জন। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটার ১,০৬,৩৪,৮৮১ জন। ৩৪ থেকে ৩৭ বছর বয়সী ভোটার ১,৪২,১৮,২৩২ জন। ৩৮ থেকে ৪১ বছর বয়সী ভোটার ১,১৮,৬৮,৩১৯ জন। ৪২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ভোটার ১,০৬,৭৬,২৭২ জন। ৪৬ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ভোটার ৬২,৬১,০৬৫ জন। ৫০ থেকে ৫৩ বছর বয়সী ভোটার ৭৯,৭২,৯২৭ জন। ৫৪ থেকে ৫৭ বছর বয়সী ভোটার ৬৭,২৯,৬১৪ জন। ৫৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ভোটার ৪১,০৯,৫০৮ জন এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ভোটারের সংখ্যা ১,৭৭,১৫,০৩৯। ইতোমধ্যে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষ হয়েছে। এখন সে তালিকা ক্রসম্যাসিং চলছে। প্রতিদিন ইসির ভোটার সার্ভার আপডেট হচ্ছে। আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি নতুনদের যুক্ত করে এবং মৃতদের বাদ দিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর ভোটারদের দাবি ও আপত্তি শেষে ২ মার্চ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তখন ভোটার সংখ্যা কমতে বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত নবম সংসদ নির্বাচনের পর যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের আমরা তরুণ ভোটার হিসেবেই বিবেচনা করতে পারি। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর থেকে ১৪ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার ৮১৫ জন তথা ৩২.৭৭ শতাংশ; ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনের সময় দেশে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। বর্তমানে ভোটার ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮১৮ জন।

নির্বাচনে তরুণ ভোটারের প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের দেশের ভোটগুলো মূলত দু-তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতা চলে আসছে, খুব বেশি হেরফের হয় না। তবে নতুন ভোটারের ক্ষেত্রে হেরফের হয়, এটা নির্ভর করে কোন দল, কত বেশি তরুণ ভোটার আকৃষ্ট করতে পারে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে। দেশের প্রধান দুই দলের ভোটের হারেও খুব বেশি তফাত নেই। তাই নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তরুণ ভোটারের প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে যারা ২০১৪-২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তারাও। ২০০৮ সালে দিনবদলের সনদ দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করেছিল আওয়ামী লীগ। আগামীতে দেখা যাক কোন দল কতটা তরুণদের টানতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তরুণরা সাধারণত শিক্ষার মান ও কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়। এ ছাড়া বিদেশমুখী তরুণদের দেশে অবস্থানের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ ও সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর পদক্ষেপ রাখতে পারে বড় ভূমিকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের অর্থবহ প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে না দেওয়া এবং মানবাধিকারকে গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়টিও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবে সেসব তরুণের দৃষ্টিকে আহত করবে।’

সর্বশেষ খবর