মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

উচ্চ আদালতে এক ক্লিকেই ইংরেজি রায়-আদেশ বাংলায়

আরাফাত মুন্না

ইংরেজিতে দেওয়া রায়-আদেশ মাত্র এক ক্লিকেই মাতৃভাষা বাংলায় দেখতে পাবেন বিচারপ্রার্থী-আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। এসব রায়-আদেশ বাংলা অনুবাদে প্রয়োজন হবে না অন্য কারও সহায়তা। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সংযোজন করা হয়েছে এ নতুন প্রযুক্তি সেবা। রায়-আদেশ জনসাধারণের বোধগম্য করতে সুপ্রিম কোর্টের নতুন এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী ও বিচার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে।

অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কয়েকজন বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় দিচ্ছেন। মাঝে মাঝেই বাংলায় আবেদন দাখিল করেন কোনো কোনো আইনজীবী। শুনানিতেও এখন বাংলা ভাষার ব্যবহার খুব বেশি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা সংস্করণ যুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাই কোর্ট) বিভাগের বিচারপতিদের দেওয়া ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে অনুবাদ সেল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত ‘আমার ভাষা’ নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায়-আদেশ দিলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় অধিকাংশ বিচারপতিই রায়-আদেশ ইংরেজিতে দেন। অনেক সময়ই সাধারণ বিচারপ্রার্থী ইংরেজি রায় বা আদেশ বুঝতে পারেন না। তাই সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়-আদেশ তাদের বোধগম্য করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপটি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায় ও আদেশ মাত্র এক ক্লিকেই মাতৃভাষা বাংলায় দেখতে পারবেন বিচারপ্রার্থীসহ সবাই। গুগলের প্রযুক্তিগত সহায়তায় সোমবার (গতকাল) এ সেবা সুপ্রিম কোর্টেল ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সেবাটি উদ্বোধন করেছেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট আগে শুধু ইংরেজি ভার্সনে থাকলেও সম্প্রতি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভার্সনও উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফলে ওয়েবসাইটে কোনো কিছু খুঁজতেও সাধারণ মানুষের আর কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া ইংরেজি রায় ও আদেশ বাংলা অনুবাদে প্রায় তিন বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল কাজ করছে। অনুবাদ সেল ব্যবহার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, এ প্রযুক্তির সংযোজন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক সময়োপযোগী নতুন মাত্রা যোগ করল।

যেভাবে কাজ করবে রায়-আদেশ অনুবাদের নতুন প্রযুক্তি : সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, রায়-আদেশ বাংলা অনুবাদের নতুন এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে একজন ব্যবহারকারীর প্রথমত ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে হবে। এরপর ব্যবহারকারী সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘রায় ও আদেশ’ মেনুতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় রায় বা আদেশ খুঁজে বের করে পাশে থাকা অনুবাদ বাটনে ক্লিক করবেন। সঙ্গে সঙ্গেই রায়টি বাংলায় অনুবাদ হয়ে যাবে। তবে ফন্ট সমস্যা হলে ডান পাশে ওপরে থাকা ভাষা বাছাই ঘর থেকে বাংলা ভাষা চিহ্নিত করে দিতে হবে। এতে করে রায় বা আদেশ যত বড়ই হোক, এটা অনুবাদে কোনো সমস্যা হবে না।

যুগান্তকারী পদক্ষেপ বললেন আইনজীবীরা : রায় ও আদেশ অনুবাদের নতুন এ প্রযুক্তিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন বিচারপ্রার্থী খুব সহজেই নিজের মামলার রায় বা আদেশ বুঝতে পারবেন। এতে কারও সহায়তা প্রয়োজন হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, আইনজীবী, বেঞ্চ সহকারী যারা আছেন, তারা দীর্ঘদিন একটি কাঠামোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় কাজ করে আসছেন। তাই চাইলেই খুব দ্রুত উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার পুরোপুরি চালু করা সম্ভব নয়। তবে সুপ্রিম কোর্ট রায়-আদেশ অনুবাদের যে প্রযুক্তি সংযুক্ত করেছে এটা অবশ্যই যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু ভাষাগত সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা দূর হবে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, রায় অনুবাদের এই পদক্ষেপ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, আমাদের বিচারপ্রার্থীরা অধিকাংশই ইংরেজিতে দেওয়া রায়-আদেশ বুঝতে পারেন না। কোনো মামলায় কেউ মৃত্যুদণ্ড পেলে রায় ইংরেজিতে হওয়ার কারণে ঠিক কী কারণে তিনি মৃত্যুদণ্ড পেলেন, একজন সাধারণ বিচারপ্রার্থী কিন্তু তা বুঝতে পারেন না। বা কারও জমির বিরোধ নিয়ে করা মামলার রায়ে কী বলা হয়েছে, তা বুঝতেও অন্যের সহায়তা নিতে হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট বিচারপ্রার্থী নিজে কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারেন না। ব্যারিস্টার আলতাফ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নতুন যে প্রযুক্তি উদ্বোধন করেছে এতে একজন বিচারপ্রার্থীর নিজের রায় বুঝতে আর সমস্যা হবে না। তিনি নিজেই সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে ওই রায় বা আদেশ মাতৃভাষা বাংলায় পড়তে পারবেন।

সর্বশেষ খবর