বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে হঠাৎ অতিবৃষ্টি ও আন্তসীমান্ত নদী থেকে আসা উজানের ঢলে দেশে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। অন্যান্য বারের মতো এবারও বন্যায় ৪০টির বেশি জেলা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাদের অনেকে। তথ্যের অভাবে বন্যার আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে বন্যা হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে কোনো সময় অতিবৃষ্টি দেখা দিলে বন্যা হতে পারে। কিছুদিন আগে সিলেটে বন্যা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র বেসিনে পানি বেড়েছিল। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। তবে বড় বন্যা হওয়ার মতো বৃষ্টিপাত দেশের ভিতরে দেখা যাচ্ছে না। ভারতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। উজানের পানিতে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদনদীতে পানি বাড়ছে। কুমিল্লার গোমতী নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে। গণমাধ্যমে দেখেছি ভারী বৃষ্টির কারণে ত্রিপুরায় স্থাপিত বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি।
পাউবোর তথ্য বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়তে পারে। অনেক স্থানে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ১৮ আগস্ট থেকে বঙ্গোপসাগরে একটা লঘুচাপ ছিল। ২০ আগস্ট লঘুচাপটি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ দিয়ে ভূমিতে উঠেছে। এ কারণে ১৯ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। মূলত হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণেই এই আকস্মিক বন্যা। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্ষায় বাংলাদেশের আন্তসীমান্ত নদীগুলোর ওপরে সঠিক নজরদারি ও শক্ত পানি কূটনীতি না থাকায় উজান থেকে যে কোনো সময় বাঁধ, স্লুইস গেট, ব্যারাজ খুলে দেওয়া হয়। আর এ কাজটি করা হয় আমাদের না জানিয়েই। নোয়াখালী-ফেনীতে আজকের বন্যার কারণ সেটাই।
অনেক দিন ধরেই এদিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশে বন্যা, আকস্মিক বন্যা ও ঢল হচ্ছে ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটার বা মূলত ভারত থেকে আসা পানির কারণে। বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশে এ রকম অনেকবার আকস্মিক বন্যা হয়েছে। কোনোবারই সরকার থেকে প্রতিবাদ করা হয়নি। বাংলাদেশকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে অনিরাপদ বা ঝামেলায় ফেলতে চাইলে পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতজানু প্রাকটিসই যথেষ্ট। এবারও বাংলাদেশের অবস্থান একই মনে করে আমাদের না জানিয়ে উজানের পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ভাটিতে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারিনি। যে কারণে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি এবার একইভাবে প্রায় ৪০টি জেলা বন্যার শিকার হতে পারে। রাষ্ট্রের এখন উচিত আমাদের বিজ্ঞানী, সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে যুতসই একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, যাতে দেশটাকে বাঁচানো যায়।