বহুল কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের হাতে প্রায় এক মাস ধরে জিম্মি ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারাউয়ি। শহরটিকে পুনরুদ্ধারে কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী; তাদের সঙ্গে রয়েছে দেশটির নৌবাহিনীও। আইএস সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটছে, গতকালও ফিলিপিনো নৌবাহিনীর ১৩ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এ অবস্থায় দেশটিকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী। তবে সরাসরি যুদ্ধ নয়, ফিলিপাইনকে তারা কৌশলগতভাবে সহযোগিতা করছে।
ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইএস সমর্থিত জঙ্গিদের হাত থেকে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটি উদ্ধারে কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২৩ মে থেকে শহরটি জিম্মি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো রকম উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। ফিলিপাইন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জো-আর হেরেরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মার্কিন সেনারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের মাঠে নেই। তবে কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে।
মার্কিন দূতাবাস থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। দুপক্ষের এই সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ককে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারণ এক বছর আগে দায়িত্ব নেয়া ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠিক বন্ধুত্বের চোখে দেখেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ ও উপদেশ গ্রহণ করবেন না বলে এর আগে জানিয়েছিলেন। দুতার্তের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্পর্ক ছিল বেশ তিক্ত। মূলত দুতার্তের আমলে দেশটিতে পরিচালিত মাদকবিরোধী যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
এদিকে মারাউয়িতে জঙ্গিদের হাতে অবরুদ্ধ নাগরিকদের উদ্ধার অভিযানে ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর ১৩ সদস্য নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অভিযান চলাকালে ৩০ থেকে ৪০ জন জঙ্গি নিজেদের রক্ষা করতে বেসামরিক লোকজনদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এ সময় সৈন্যদের পক্ষে অভিযান পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। জঙ্গিদের ছোড়া বিস্ফোরকে ১৩ জন মেরিন সেনা প্রাণ হারান।
সরকারি তথ্যমতে, মারউয়িতে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তি, ১৩৪ জন জঙ্গি ও ৩৯ জন সরকারি সৈন্য নিহত হয়েছেন।
সংঘাতের মুখে এ শহর ও মিন্দানাও দ্বীপসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক শাসন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ফিলিপাইনের ভবিষ্যতকে ইরাক কিংবা সিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: রয়টার্স ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিডি প্রতিদিন/ ১১ জুন ২০১৭/ ই জাহান