গোটা ভারতে একজন অনুপ্রবেশকারীদেরও থাকতে দেওয়া হবে না। অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাদের বিতাড়িত করা হবে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
মঙ্গলবার কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) সম্পর্কিত একটি সভায় উপস্থিত থেকে অমিত শাহ এসব কথা বলেন। লোকসভা ভোটের এটাই তাঁর প্রথম রাজ্য সফর। আর সেই সফরে এসেই এনআরসি ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করেন শাহ। তবে এনআরসি’এর আগে বাংলাতে নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়িত করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন ‘এনআরসি নিয়ে গোটা বাংলাতে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। মমতা দিদি বলছেন এনআরসি হলেই লাখ লাখ হিন্দু শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু এর থেকে আর বড় মিথ্যা হতে পারে না। আমি বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই যে অন্য রাষ্ট্র থেকে ভারতে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন শরণার্থী ভাইদের ভারত সরকার এদেশ থেকে কোথাও বিতাড়িত করবে না।’
অমিত শাহ এদিন জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এনআরসি’র প্রথমে নাগরিক (সংশোধনী) বিল আনতে চায়। এর অর্থ হল দেশের মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মমতা দিদির সরকার যতই বিরোধ করুক না কেন, মোদি সরকার এই বিল পাশ করাবে।’
অমিত শাহ আরও বলেন, ‘মমতা দিদি বলছেন আমরা এনআরসি হতে দেবো না। কিন্তু আমরা বলছি যে গোটা ভারতে একজন অনুপ্রবেশকারীদেরও আমরা থাকতে দেবো না। প্রত্যেককে চিহ্নিতকরণ করে বিতাড়িত করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে মমতা ব্যনার্জির বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই মমতাই যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন না, সে সময় এই অনুপ্রবেশকারীরা বামেদের ভোট দিতো। ২০০৫ সালের আগস্টে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবিতে সংসদে স্পিকারের মুখের ওপর নথি ছুঁড়ে মেরেছিলেন। সংসদ চালাতে দেননি। আর এখন যখন এই অনুপ্রবেশকারীরাই তাদের ভোটব্যাঙ্কে পরিণত হয়ে গেল-তখন উনি বলছেন এদের তাড়াতে দেওয়া যাবে না।’
অমিত শাহ বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতেই এনআরসি অত্যন্ত জরুরি। এই প্রক্রিয়া চালু না করা গেলে ভবিষ্যতে দেশকে বড় ক্ষতির মাশুল গুণতে হতে পারে।’ তাঁর অভিমত, ‘রাজনীতির স্বার্থ দেশের স্বার্থের থেকে বড় হতে পারে না, রাজনীতির স্বার্থ বাংলার থেকে বড় হতে পারে না। আমরাও রাজনীতি দল চালায়, কিন্তু দেশের স্বার্থের বিষয় আসে তখন বিজেপির স্বার্থ দেখি না।’
এদিনের সভা থেকে বাংলার বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তার বার্তা, ‘আপনারা প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে শরণার্থীদের আশ্বস্ত করুন, তারা যেন দেশ ছাড়ার আতঙ্কে না ভোগেন। তাদের সকলেই দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা প্রত্যাহার নিয়েও তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে যখন এই বিলটি পাশ হয় তখন তাদের সাংসদরা সংসদে অনুপস্থিত ছিল। আমাদের বাংলার দলীয় সাংসদরা ভোট দিয়ে এই ধারা ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু তৃণমূলের কেউ ছিলেন না। যদিও আমাদের কোন সংকোচের কারণ নেই। আমরা মনে করি এই ধারা প্রত্যাহারের মাধ্যমে কাশ্মীরকে চিরদিনের জন্য ভারতের অন্তর্ভূক্ত করা গেছে এবং নরেন্দ্র মোদি প্রয়াত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির স্বপ্নকে পূরণ করেছেন।’
যদিও অমিত শাহের আগেই এদিন রাজ্যটির সচিবালয় নবান্নে একটি সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এনআরসি নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এনআরসি নিয়ে অযথা আতঙ্কের কোন কারণ নেই। এনআরসি এ রাজ্যে চালু করার ব্যাপারে তাঁর কাছে কোন খবর নেই বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী রাজ্য আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর নাগরিকত্বের প্রশ্নকে ঘিরে যে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে-তার আঁচ পড়েছে পশ্চিমবঙ্গতেও। সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশ। এনআরসি আতঙ্কেই কয়েকজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ। এমন এক পরিস্থিতিতে এদিন রাজ্যে আসেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা। স্বভাবতই তার বক্তব্যের দিকেই তাকিয়ে ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। অমিত শাহ ছাড়াও এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী রায় চৌধুরী, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব