হিজবুল্লাহর যোগাযোগ কাজে ব্যবহার করা পেজার যন্ত্রে লাগাতার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ইসরাইল। আর সে কারণেই পুরাতন যন্ত্রটি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষকরাও অনেকটা ভড়কে গেছেন।
পেজার কী?
পেজার মূলত ছোট এবং বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস। সংক্ষিপ্ত বার্তা বা সতর্কতা পাঠাতে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ পেজার বেস স্টেশন থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ বা বার্তা পাঠায় ও গ্রহণ করে। এই বার্তা কোনও সংখ্যা হতে পারে, আবার কোনও শব্দবন্ধও হতে পারে। এই ডিভাইসটির ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়। যখন পেজারে কোনও বার্তা আসে, তখন এতে শব্দ হয়, ঠিক যেমন মোবাইলে মেসেজ আসলে নির্দিষ্ট টিউন বাজে। যেহেতু পেজারে মোবাইল নেটওয়ার্কের দরকার পড়ে না, তারহীন এই যন্ত্রে বার্তা আসে, তা দেখা যায়; কিন্তু এই যন্ত্রের মাধ্যমে ফোন করা যায় না। তাই এটি যোগাযোগের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হত।
হিজবুল্লাহ কেন পেজার ব্যবহার করে?
পেজার ব্যবহার কমে গেলেও, এখনও কিছু ক্ষেত্রে পেজার ব্যবহার করা হয়। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশে স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা খাতে পেজার এখনও ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং নেটওয়ার্ক ছাড়াই কাজ করার ক্ষমতার জন্য এগুলো নির্ভরযোগ্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হিজবুল্লাহর সদস্যরাও পেজার ব্যবহার করে।
এতো পেজার একসাথে কিভাবে বিস্ফোরিত হলো?
বিশ্ব গণমাধ্যমের খবর বলছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ক্রয় করা পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে কৌশলে বিস্ফোরক জমিয়ে রেখেছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার কয়েক মাস আগে থেকেই তারা গোপনে এই কাজটি করে। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের দাবি, পেজারগুলো তাইওয়ানভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির। এই কোম্পানি থেকিই পাঁচ হাজার পেজার কেনে হিজবুল্লাহ। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে পেজারের চালানটি লেবাননে পৌঁছায়।
লেবাননের সূত্রের দাবি, মোসাদ পেজার যন্ত্রের ভেতরে একটি বিশেষ বোর্ড ঢুকিয়ে দেয়। আর সেই বোর্ডেই লুকিয়ে রাখা হয় বিস্ফোরক উপাদান। আর সেই বোর্ডে এমন চিপস লাগানো ছিলো যা বিশেষ সাংকেতিক ভাষা বুঝতে পারদর্শী। আর সেই লুকিয়ে রাখা বোর্ড বা বিস্ফোরক শনাক্ত করাও ছিল খুব কঠিন। কোনো যন্ত্র বা স্ক্যানার দিয়েও তা শনাক্ত করা যায়নি। লেবাননেরর দাবি, যে পেজারগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে, সেগুলো বিস্ফোরণের আগে সাংকেতিক বার্তা পাঠানো হয়েছিল। আর এ কারণে বিস্ফোরকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন এই পেজারগুলোর মধ্যে তিন গ্রাম পর্যন্ত বিস্ফোরক লুকানো ছিলো বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামলার জন্য কেন পেজারকেই বেছে নেওয়া হল?
তাদের অবস্থান আড়াল করে রাখার জন্য মোবাইল ফোনের বদলে পেজার ব্য়বহার করেন হিজবুল্লার সদস্যরা। তারা যেখানে যান, যোগাযোগের জন্য এই ডিভাইসটি সঙ্গে করে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যত সেকারণেই ঝাঁঝালো হামলার জন্য পকেটের ভিতরের এই ছোট্ট ডিভাইসটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে ৷
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল