ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশেষে স্বীকার করলেন, তাঁর সেনাবাহিনী রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে। টেলিভিশনে জেলেনস্কি এক ভাষণে বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধকে ‘আগ্রাসীদের অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার ভূখন্ডে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে। গতকাল শনিবার ওই হামলা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ভিতর ১০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে গেছে বলেও জানা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার থেকে রাশিয়ায় নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে কিয়েভ। সে দিনই রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রায় ১০ কিমিরও বেশি অগ্রসর হয়েছে তারা। মস্কো ২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে এটিই ইউক্রেনের বড় অভিযান।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার ভোরেও পাল্টা জবাবে ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রাশিয়া। শনিবার রাতের ভাষণে ইউক্রেনের ‘যোদ্ধা’দের ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই রাশিয়ায় অভিযান নিয়ে দেশের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারসহ অন্যান্য কর্তার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই রাশিয়ার ভূখন্ডে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। গত সপ্তাহেও কুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায় ইউক্রেনের ছোড়া ড্রোন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়।
কুরস্ক অঞ্চলে রুশ সীমান্তে ইউক্রেনীয় সেনারা কয়েক কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। যা রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে রিজার্ভ ও অতিরিক্ত সরঞ্জাম পাঠাতে বাধ্য করেছে। উভয় পক্ষই কত সংখ্যক বাহিনী নিয়োজিত আছে তা স্পষ্ট করেনি। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এই অভিযান তাদের মনোবল বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী, রাষ্ট্র ও সমাজের মনোবল বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, এটি প্রমাণ করছে, আমরা আক্রমণাত্মক এবং এগিয়ে যেতে পারি। মনে হচ্ছে রুশরা সমন্বয় ও প্রস্তুতির জটিলতায় ভুগছে।
তবে ইউক্রেনের এই অভিযানে পূর্বাঞ্চলের রণক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ওই কর্মকর্তার মতে, পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতি মূলত অপরিবর্তিত রয়েছে। রুশদের চাপ অব্যাহত আছে ও তারা ওই এলাকা থেকে সেনা সরাচ্ছে না।
রাশিয়ার প্রদেশ কুরস্কের গভর্নর অ্যালেক্সি স্মাইরভ গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, রুশ ভূখন্ডে ধারাবাহিকভাবে ড্রোন হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন সেনা। তাঁর অভিযোগ, ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুর’ বদলে ইউক্রেন সেনা বেছে বেছে জনবসতির ওপরে হামলা চালাচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রায় ৭৬ হাজারেরও বেশি নাগরিককে কুরস্ক অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার ভোরোনজে ও বেলগোরোড অঞ্চলেও ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার খবর এসেছে। এর পর থেকেই রাশিয়ার সীমান্তবর্তী তিন এলাকায় জারি হয়েছে কড়া নজরদারি।
প্রসঙ্গত, গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। গত আড়াই বছরে দুই দেশের সামরিক সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তছনছ হয়ে গেছে ইউক্রেনের অজস্র ছবির মতো সাজানো শহর। প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কির বাহিনী ‘আত্মরক্ষার লড়াই’ চালালেও গত কয়েক মাসে মূল রুশ ভূখন্ডে প্রতি-আক্রমণ শুরু করেছে তারা।