কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ন্যায়বিচার চেয়ে আজ পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। এ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।
কিন্তু কোথা থেকে এই মিছিল আসবে, কত লোক হবে, কোথায় জমায়েত হবে- তার কোনো তথ্যই ওই সংগঠনের তরফে কলকাতা পুলিশকে দেওয়া হয়নি। নবান্ন অভিযানের নামে ভিড়ে মিশে গিয়ে সহিংসতা ছড়াতে পারে দুর্বৃত্তরা। আর তাতেই ঘুম উড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার ও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। নবান্ন অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগেই ভিডিও প্রকাশ করে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও দলের নেতা কুণাল ঘোষ দুটি ভিডিও সামনে আনেন। তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডেলেও ওই ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিওতে নবান্ন অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুই ব্যক্তির কথোপকথন সামনে আসে। তাদের বলতে শোনা যাচ্ছে ‘যদি না লাশ পড়ছে, তবে কোনোদিন মোড় ঘুরবে না।’ সেই ভিডিও দেখেই কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযান সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈধ। কোনো দায়িত্বশীল সংগঠন প্রশাসন/ পুলিশকে জানিয়ে এ কর্মসূচি করছে না। যারা বাংলায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তারাই লোককে উসকিয়ে গোলমাল করার চেষ্টা করছে। বিজেপি, আরএসএস এগুলোকে প্রমোট করছে। বাইরের রাজ্য থেকে এখানে লোক ঢুকিয়ে গন্ডগোলের সৃষ্টি করা হতে পারে। পুলিশের পোশাক পরে মিছিলের ভিড়ে মিশে গিয়ে গুলি চালানো হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কুণাল ঘোষ। ছাত্র সমাজের তরফে এই নবান্ন কর্মসূচির বিরোধিতা করেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। তৃণমূল কংগ্রেসের পর রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকেও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, ‘এই নামে কোনো ছাত্র সংগঠন নেই। এর আগে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুরু থেকে বলা হচ্ছে এই আন্দোলন অ-রাজনৈতিক। অথচ এদের নামে যে ফেসবুক পেজটা আছে সেখান থেকে পরিষ্কার কে বা কারা এর নেপথ্যে রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলন করে সুপ্রতিম সরকার জানান, ‘এ অভিযান সম্পূর্ণ বেআইনি। এ অভিযানকে পুলিশ কখনো সমর্থন করে না। যে বা যারা এ অভিযানের ডাক দিয়েছে তারা দুর্বৃত্ত।’ সাধারণ মানুষকে এ অভিযান থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ কুমার ভার্মা দাবি করেছেন, ‘মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নামে নবান্ন অভিযানের যে পৃথক কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, তার কোনোটির জন্যই পুলিশের থেকে কোনো আগাম অনুমতি চাওয়া হয়নি। আমি অনুরোধ করব যে, সাধারণ মানুষ যাতে এ অশান্তির ফাঁদে পা না দেন।’ এদিকে নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে হাওড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।