আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শাস্তিমূলক শুল্কের কারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার মাঝেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আজকের দুনিয়ায় নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকার তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে। দিল্লিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্প মনোনীত সার্জিও গরের নিয়োগ নিয়ে সিনেট শুনানিতে বৃহস্পতিবার রুবিও এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির শুনানিতে রুবিও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। ‘সার্জিও গর ভারতের (রাষ্ট্রদূত পদে) জন্য মনোনীত হয়েছেন, ভবিষ্যৎ বিশ্ব কেমন হবে, সে বিচারে আজকের দুনিয়ায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে। একই কথা আমি যখন (পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে) মনোনীত ছিলাম, তখনো বলেছি। ‘একবিংশ শতকে ইতিহাস লেখা হবে ইন্দোপ্যাসিফিকে। এর গুরুত্ব এতটাই যে আমরা ওই অঞ্চলের সামরিক কমান্ডের নামও বদলে ইন্দো-প্যাসিফিক রেখেছি। ভারত এর কেন্দ্রেই রয়েছে,’ বলেছেন রুবিও। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন ‘নজিরবিহীন রূপান্তরের মধ্য’ দিয়ে যাচ্ছে বলেও জোরের সঙ্গে বলেন মার্কিন এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘আমাদের হাতে কিছু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার রয়েছে যা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করা দরকার; কেবল ইউক্রেন যুদ্ধে নয়, ওই অঞ্চলে যা ঘটছে তার ওপরও এসব কাজের প্রভাব থাকবে,’ রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখায় নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন চলছে সেদিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন রুবিও। ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত তেল কিনে রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থের জোগান দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য কথা। তাদের মতে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা আগের তুলনায় বাড়ালেও নয়াদিল্লি মোটেও মস্কোর তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নয়। ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্ক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনাও থমকে পড়েছিল, কয়েকদিন পর থেকে ওই আলোচনা ফের শুরু হওয়ার কথা। গরের প্রসঙ্গে রুবিও বলেন, ভারতে এমন কাউকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি করে পাঠানো দরকার যার ওপর প্রেসিডেন্টের আস্থা আছে এবং যার কথা প্রেসিডেন্ট শোনেন। ‘প্রেসিডেন্টের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ গর ‘প্রশাসনিক পর্যায়ে ও ওভাল অফিসের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম’, বলেছেন তিনি। ‘আমি এমন কারও কথা জানি না যিনি গরের চেয়ে যোগ্য,’ বলেন রুবিও। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গরকে প্রেসিডেন্টের কর্মী সংক্রান্ত পরিচালক থেকে পদোন্নতি দিয়ে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। ‘ভারত একটি কৌশলগত অংশীদার, যার গতিপথ ওই অঞ্চল এবং এর বাইরেও প্রভাব ফেলবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃঢ় নেতৃত্বের, আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর,’ সিনেটে নিয়োগ নিশ্চিতের শুনানিতে এমনটাই বলেছেন ৩৮ বছর বয়সি গর। সিনেটের অনুমোদন পেলে, তিনি হবেন ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কমবয়সি রাষ্ট্রদূত। -রয়টার্স