১৫ নভেম্বর, ২০২০ ১০:২৩

মানব জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী


মানব জীবনে সুন্নাহর গুরুত্ব

সুন্নাহ শব্দটি মুসলিম সমাজে একটি সুপরিচিত পরিভাষা। সুন্নাহ বিশ্লেষক আলেমগণ বলেন, বিশেষ করে যেসব

বিষয় পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নয়, কেবল রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, নির্দেশিত শরিয়তের সেসব বিষয়কে সুন্নাত বলে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করতে হলে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-বিধি, নীতি-আদর্শ, পথ-মত, জাহিলিয়াত ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অনেক আলোচনা বিদ্যমান।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে রসুল! (সা.) আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, রসুল (সা.) তোমাদের যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক। (সুরা হাশর : আয়াত ৭)। যে রসুলের (সা.) আনুগত্য করল, সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, আমি আপনাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি। (সুরা নিসা : আয়াত ৮০)। তোমাদের জন্য আল্লাহর রসুল (সা.)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)। এমনিভাবে পবিত্র কোরআনে সুন্নাহর অনুকরণ-অনুসরণের জন্য অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন এ কথাও বলেছে, কেউ যদি সুন্নাহর অনুসরণ না করে, তবে তার ইমান যথাযথ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে অর্থাৎ নবী (সা.)-কে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনোরকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে। (সুরা নিসা : আয়াত ৬৫)। তিনি আরও বলেন,  আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.) কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে অন্য কোনো এখতিয়ার থাকে না। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সুরা আল-আহযাব : আয়াত ৩৬)। ইহ-পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধু কোরআন ও রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরামগণের (রা.)-এর আদর্শেও বিদ্যমান। রসুল (সা.)-এর আদর্শ সেভাবেই অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত মুহাজির ও আনসারগণ (রা.) অনুসরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, মুহাজির ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহে প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটাই হলো মহান সফলতা। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১০০)। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে হুজুর (সা.) নিজেই বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না : আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : হাসিদ নম্বর : ৩৩৩৮)।

লেখক : খতিব, মনিপুর বাইতুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর