রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মেয়র আইভী পরিবারের বিরুদ্ধে মন্দিরের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে গণসমাবেশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মেয়র আইভী পরিবারের বিরুদ্ধে মন্দিরের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

মেয়র আইভী পরিবারের বিরুদ্ধে মন্দিরের সম্পত্তি দখলের অভিযোগে গতকাল নারায়ণগঞ্জে সমাবেশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা মূল্যের একটি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে গণসমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে যে কোনো মূল্যে মেয়র ও তাঁর পরিবারের কবল থেকে ওই মন্দিরের সম্পত্তি উদ্ধারের শপথ নেন প্রতিবাদকারীরা। সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মেয়র আইভীকে কোনোভাবেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে হাত দিতে  দেওয়া হবে না। গতকাল বিকালে শহরের দেওভোগ এলাকায় জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে আয়োজিত ‘শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’ ও মন্দিরের দাবিকৃত সম্পত্তি জিউস পুকুর এলাকায় গণসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে জিউস পুকুর ঘেরাও করে সমাবেশে একাত্মতা জানান নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন নেতারা ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন।

সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, নারায়ণগঞ্জ নগরী স্থাপনের সময় শ্রী ভিকন লাল ঠাকুর শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় দেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের নামে ‘শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। শত বছর ধরে এই মন্দির নারায়ণগঞ্জের হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে পবিত্র ও শ্রদ্ধার কেন্দ্র। স্বর্গবাসী ভিকন লাল পান্ডে মন্দিরটির পাশে পূজা-অর্চনা ও আশপাশের অধিবাসীদের সুবিধায় ৩৬৭ শতাংশ জমির ওপর পুকুর খনন করান, যা স্থানীয়দের কাছে জিউস পুকুর নামে পরিচিত। কিন্তু আমাদের এই মন্দিরের সম্পত্তি নাকি এখন আইভী ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তি। তিনি বলেন, মন্দিরের সম্পত্তি দখল করা দুর্বৃত্তদের কাজ। প্রচলিত আইনে দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ। অথচ জাল দলিল করে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করার অপচেষ্টা করছে মেয়র আইভী ও তাঁর পরিবার। আমরা আমাদের ধর্মের এ আমানত রক্ষায় প্রয়োজনে চিতাদাহ হতে প্রস্তুত আছি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল থেকে দেবোত্তর এই সম্পত্তি দখল করতে উঠেপড়ে লাগে মেয়র আইভীর পরিবার। যে নকল দলিল করে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে মেয়র আইভীর মা, দুই ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনের নাম রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, মন্দিরের সম্পত্তি দখলের বিষয়ে মেয়রের বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় মেয়র আমার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, মেয়র আইভী কখনো মসজিদ, কখনো মন্দির, আবার কখনো বঙ্গবন্ধুর হাতে উদ্বোধনকৃত স্কুল ভেঙে দেন। তিনি নাকি আওয়ামী লীগ করেন। তাঁর এসব কর্মকান্ডে প্রাণের দল আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই চুপ থাকতে পারি না।

নারায়ণগঞ্জ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল বলেন, মন্দিরের সম্পত্তি দখলে মেয়র আইভী যে স্বপ্ন দেখছেন তা স্বপ্নই থেকে যাবে। গণসমাবেশে সভাপত্বি করেন নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা। সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান, জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, মহানগর সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল ও সাধারণ সম্পাদক নিমাই দে, শহরের বাগে জান্নাত মসজিদের মুসল্লি আরাফাত ইসলাম সুজন, শহরের হকার নেতা বিল্লাল হোসেন, ফতুল্লার মসাদাইর এলাকার মুসল্লি হাজী বিল্লাল হোসেন।

সর্বশেষ খবর