শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আশু সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই

ওয়ালিউর রহমান

আশু সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই

সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। আমি খুব একটা আশাবাদি নই। কোনো পক্ষ থেকেই তেমন কোনো আশার পদক্ষেপ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মিয়ানমার থেকে সবার দৃষ্টি সড়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, সমাধান করতে হলে সমাধানের উপায় নিয়ে কাজ করতে হবে। এর একটা উদাহরণ হলো সিরিয়ার শরণার্থী নিয়ে তুরস্কের পদক্ষেপ। তুরস্কে যখন এক মিলিয়ন সিরিয়ার শরণার্থী এলো তখন তুরস্ক বলল আর রাখতে পারব না। পরে যখন তিন মিলিয়ন এলো তখন তুরস্ক বলল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সাহায্য না করলে সবাইকে বের করে দিব। এরপর ইইউ প্রতি মাসে একটা থোক বরাদ্দ প্রতি মাসে দেওয়া শুরু করল তুরস্ককে। এরপর যখন ছয় মিলিয়ন ছেড়ে গেল তখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে শরণার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হলো। তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ অন্য সব ব্যবস্থা তুরস্কই করল। তারা সেখানে ১০-১২ বছর ধরে আছে। আমাদের বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বসবাস পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো সমাধান হলো না। ওয়ালিউর রহমান বলেন, সর্বশেষ যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হলো তখন চীনের প্রেসিডেন্ট বললেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। পরের সপ্তাহেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নেপিদো পাঠিয়ে সমাধান করার কথাও জানান তিনি এবং এক মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন হবে। সেই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট এক লাখের মতো রোহিঙ্গার বাংলাদেশে থাকার কথা বলেছিলেন। পরে তাদেরকেও ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। চীনা কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট এই প্রস্তাবের চার বছর পার হলো এখনো এর কিছুই হলো না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে নিরাপত্তার বিষয়টা নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত। হাজার হাজার মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার পরিমাণও দিন দিন কমে আসছে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এখন আমাদেরকে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা নিয়ে বড় ডিবেট করতে হবে। সেখান থেকে এই বিষয়কে আবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠাতে হবে। সেখানে পশ্চিমা দেশগুলো আমাদেরকে সাপোর্ট করবে। কিন্তু রাশিয়া ও চীন কখনোই আমাদেরকে সাপোর্ট করেনি। রাশিয়া যদি সাপোর্ট করে তাহলে চীন নিরাপত্তা পরিষদে একা হয়ে পড়বে। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতে আমাদের দেখার বিষয় রাশিয়া এটাতে সাপোর্ট করে কিনা। কারণ রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে আমরা ভোট দেইনি। এক অর্থে এটা রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানো। আবার রাশিয়ার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আমরা সার, গম, তেল কেনার চিন্তা করছি। দেখা যাক, এবার তাদেরকে আমরা পক্ষে আনতে পারি কি না।

সর্বশেষ খবর