দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
দুদক সূত্র বলছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানি আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব কোম্পানিতে তার বিনিয়োগ ১৭ দশমিক ২০ কোটি পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। তিনি সেখানে প্রথম কোম্পানি স্থাপন করেন ২০১০ সালে, আর পঞ্চম ও ষষ্ঠ কোম্পানি ২০২১ সালে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি এবং প্লট-ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, জোয়ার সাহারা, সাভার ও পূর্বাচলে জমি, প্লট ও বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আছাদুজ্জামানের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে পরিবহনসহ নানা ব্যবসাতেও বিনিয়োগ রয়েছে। আছাদুজ্জামানের নামে গাজীপুরে দেড় একর জমি, আফতাবনগরে ৬ কাঠার প্লট, পুলিশ হাউজিং আবাসিক এলাকায় ৬ কাঠা, পূর্বাচলে ৩ কাঠা, একই এলাকায় ৫ কাঠার প্লট ও সাভারে ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এদিকে তার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা ভবন, ইস্কাটন গার্ডেন ও ধানমন্ডিতে দুটি আলিশান ফ্ল্যাট। এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় আফরোজার নামে প্রায় ১১০ শতাংশ জমি, ঢাকার জোয়ার সাহারা এলাকায় ৫৪ শতক জমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় টাওয়ারে ৪ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে প্লট রয়েছে। আর ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ট্রিপ্লেক্স বাড়ি এবং আফতাবনগরে তার নামে ৫ কাঠার প্লট আছে। আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে বিলাসবহুল প্রমোদাগার। জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। রিসোর্টটিতে শত কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। পুলিশের আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুনের প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। তিনি হলি ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা অন্যদের।
আমু-হারুন পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ : পরিবারসহ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গতকাল দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে লেনদেন ও ব্যাংক হিসাবের স্থিতির তথ্য পাঠাতে বলেছে বিএফআইইউ। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
অপর এক চিঠিতে হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের (মা, বাবা, ভাই, বোন) নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাব সংক্রান্ত তথ্য বা দলিলাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি দলিলাদি, লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি) এবং প্রদত্ত এক্সেল সিট মোতাবেক তথ্যাদি পত্র ইস্যুর তারিখ থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়। তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে তাও জব্দ থাকবে। হিসাব জব্দের ফলে এখন থেকে তারা আর কোনো টাকা তুলতে পারবেন না। হিসাব জব্দকৃতদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাক?বে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে।