বন্যায় ভেসে গেছে সব। চারদিকে এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস। কিছুদিন আগেও যেখানে ঘর ছিল, সেখানে এখন ডোবা। চট্টগ্রামে তলিয়ে গেছে খামারিদের স্বপ্ন। ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কিছু জায়গায় এখনো রয়ে গেছে পানি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ২১ আগস্ট দিবাগত রাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ার হাওড়া নদীতে পানি ঢুকতে শুরু করে। বন্যার পানি হাওড়া নদীর খলাপাড়া বাঁধের ওপর দিয়ে যেতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত আড়াইটার দিকে খলাপাড়া এলাকার কবরস্থান ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের নদীর বাঁধের তিনটি অংশ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া পানির চাপে উপজেলার দুটি সড়কের আটটি স্থান ভেঙে যায়। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে খলাপাড়ার পূর্ব-উত্তর দিকের জায়গায় থাকা তিনজনের বসতঘরসহ চার থেকে পাঁচ ফুট দেবে যায়। বাসিন্দারা কোনোমতে বসতঘর থেকে বের হয়ে প্রাণ বাঁচান। আসবাবসহ ঘরের মালামাল বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা এখন ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বন্যায় খলাপাড়া এলাকাসহ আখাউড়া উপজেলার বেশ কিছু এলাকার হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে যাদের ঘর নেই, তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিজের জায়গায় কোনোরকমে দিন যাপন করছেন।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে বন্যায় মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফটিকছড়িতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন খামারিরা। এসব উপজেলায় ঘরবাড়ি-দোকানপাটসহ নানা স্থাপনার পাশাপাশি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে গবাদি পশুপাখির তিন শতাধিকের ওপরে খামার। এতে হাজার হাজার গবাদি পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে খামারিদের স্বপ্ন। নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখির খাবারও। জেলা প্রাণিসম্পদের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি ৯৭ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা। তার মধ্যে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পশুপাখির মৃত্যু ও দুধ-ডিম বিনষ্টজনিত ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা।
ফেনী : ফেনীর ১৪-১৫টি গ্রাম ছাড়া বাকি এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। এসব গ্রামের গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, জেলার ২২টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো ৪ হাজারের বেশি আশ্রিত রয়েছে। এবারের বন্যায় ফেনীর সড়কে ক্ষতি প্রায় ১৪০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। মেরামত করতে হবে গ্রামীণ ৫০০ কিলোমিটার সড়ক। বন্যায় জেলার প্রায় সড়ক ভেঙে গেছে। পোলট্রি ও মৎস্যখাত সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। পুঁজি হারিয়ে অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বন্যায় জেলায় মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল।