প্রবারণা পূর্ণিমা। মারমা ভাষায় যার নাম ওয়াগোয়াই পোয়ে। এ পূর্ণিমাতে উৎসব পালন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। আশ্বারী থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে বিহারে ফিরে আসা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের স্বাগত জানানো হয় এ উৎসবে। এটি পার্বত্যাঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কঠিনচীবর দান উৎসব নামেও পরিচিত। প্রবারণায় যোগ দিতে গতকাল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের ঢল নেমেছিল বিহার এলাকায়। ছোটবড় বিভিন্ন নারী-পুরুষে পরিপূর্ণ ছিল রাঙামাটি রাজবন বিহার। এদিন সকাল ৯টায় রাঙামাটি রাজবন বিহারের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় প্রবারণা পূর্ণিমা বিশেষ প্রার্থনা। শেষে ফিরে আসা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মান আর সংঘ দান ও অষ্টপরিষ্কার দান করার জন্য ঢল নামে হাজারো পুণ্যার্থী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের। এ সময় বিশেষ প্রার্থনায় ধর্মীয় দেশনা দেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। ভক্ত আর পুণ্যার্থীর সাধু সাধু ধ্বনিতে প্রবারণার উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজবন বিহার এলাকায়। প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন ও জেলা বিএনপির সভাপতি দীপেন তালুকদার দীপু। রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, শান্তি সম্প্রীতি আর মৈত্রিতে আবদ্ধ হয়ে জগতের সুখ-শান্তি লাভ করতে এ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। যাতে আগামী বছরগুলো শান্তি কাটে সবার। তিনি আরও বলেন, এবার প্রবারণা উৎসব হলেও হচ্ছে না কঠিনচীবর দান উৎসব। পার্বত্যাঞ্চলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমেনি। তাই বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। শুধু প্রার্থনা আর প্রদীপ প্রজ্বালন করে শেষ হচ্ছে ধর্মীয় উৎসব। পটুয়াখালীতে প্রবারণা উৎসব : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা পালন করছেন অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণে উৎসবটি পালন করে তারা। গতকাল সকালে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল প্রার্থনা এবং বুদ্ধপূজার মধ্যে দিয়ে দিনটির সূচনা হয়। পরে বৌদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ফল ও হরেক রকমের পিঠাপুলি বৌদ্ধ ভিক্ষুকে প্রদান করেন বয়স্ক নারী-পুরুষরা। উৎসবটি ঘিরে উপজেলার রাখাইন পাড়াগুলোতে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। এ উৎসব ঘিরে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা জমায়েত হয়েছে।
কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধাক্ষ্য ইন্দ্র বংশ ভান্তে জানান, এটা আমাদের প্রধান উৎসবের মধ্যে অন্যতম উৎসব। সন্ধ্যায় শতাধিক ফানুস উড়িয়ে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবারের প্রবারণা উৎসব। মিশ্রীপাড়া সিমা বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি মংলাচি তালুকদার বলেন, ‘এ উৎসব ঘিরে নানা বয়সি মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। জগতের সবার মঙ্গল কামনা করছি। আজ (গতকাল) আলোর ঝলকানিতে ফানুস উড়ানো হবে। এ উৎসবে চাওয়া হলো জাগতিক সবাই ভালো থাকুক। কারও অমঙ্গল না হোক।’