ভোটের আগেই সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনের সুপারিশ সংবলিত চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে জাতীয় বেতন কমিশন। এরই মধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ কী পরিমাণ অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া যাবে- সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জানতে চেয়ে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে জাতীয় বেতন কমিশনের পক্ষ থেকে।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের নেতারা। ওই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন বলেও সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছেন। এ আলটিমেটামের মধ্যেই অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চেয়েছে নতুন বেতন কমিশন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো নির্ধারণে সাবেক অর্থ সচিব এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খানকে প্রধান করে গত ২৭ জুলাই জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই কমিশনকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে জানুয়ারিতে। গঠিত বেতন কমিশন এবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন বেতন কাঠামোতে গ্রেড কমানো এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের মধ্যে বৈষম্য কমানোসহ বিভিন্ন ভাতা যৌক্তিকীকরণের দাবি জানিয়েছেন ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের নেতারা। গত ১০ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন বেতন ৩২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ধরে ১৩ গ্রেডের নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব করেন তারা। ওই সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে ফোরামের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, অন্যথায় কর্মচারীরা আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে। ভোট আয়োজনে নানাবিধ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটাই প্রশ্ন- ভোটের আগেই বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা হবে তো? কারণ এর আগে বেতন কাঠামো নির্ধারণে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর নজির রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করে যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দশম ও এগারতম গ্রেডের একাধিক পিও, এপিও! সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরেই যাতে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা যায়- সে লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের কাছে সম্পদ পরিস্থিতি এবং অতিরিক্ত বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চেয়ে গত ৭ অক্টোবর চিঠি দেয় জাতীয় বেতন কমিশন। নতুন বেতন সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের কৌশল ও পরিকল্পনা কী হবে- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
অর্থ বিভাগের কাছে ‘অতিরিক্ত বরাদ্দ’ জানতে চাওয়ার বিষয়টি- ভোটের আগেই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে বলে সূত্র জানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বেতন কমিশনের সভাপতি জাকির হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থ বিভাগের কর্মকৌশল জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অংশীজনের মতামত, জরিপ, জীবনযাত্রার ব্যয়, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা থেকেও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি আমরা।’ কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী নতুন বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান গ্রেড কমানো ও ভোটের আগে সুপারিশ জমার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সভাপতি বলেন, ‘অনেক কিছুই হতে পারে-আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। এরই মধ্যে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, যথাসময়ে সুপারিশ জমা দিতে পারব।