দেশের কৃষি খাতে যুক্ত হতে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন। এই প্রযুক্তি কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা পানি কিংবা কীটনাশক ছিটানো ইউরোপ-আমেরিকার কৃষি খাতের জন্য বেশ পুরনো। এর মাধ্যমে বিস্তীর্ণ খেতের রেন্ডম ছবি তুলে পোকা দমন প্রক্রিয়াও অধিকতর সহজ পদ্ধতি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং চীনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে। এবার এই ড্রোন প্রযুক্তি যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি খাতে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক একর জায়গায় সবজি বা বিশেষায়িত কোনো কৃষিপণ্য আবাদে জমিতে বালাইনাশক বা পানি স্প্রে করতে ২৫০-৩০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া সময় লাগে ১-৩ ঘণ্টা। সেখানে পানি স্প্রের কাজটি ড্রোনের মাধ্যমে করলে মাত্র ১৫-২০ লিটার পানির প্রয়োজন হবে। সময় লাগবে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এ কাজটি করলে অল্প সময়ে, কম খরচে অনেক বেশি জমিতে কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করা সম্ভব। জমি চাষের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, ফসল পর্যবেক্ষণ, আগাছা, কীটপতঙ্গ এবং রোগের হাত থেকে ফসলের সুরক্ষা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষিজ উপকরণের ডেটা সংগ্রহ ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ড্রোন ব্যবহার করছে। উন্নত প্রযুক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত ও ফিলিপাইনে ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে। ভারতে এর আগে ড্রোনের ব্যবহার শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। ড্রোন কেনার জন্য ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকদের ৫০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার করার পর চীনের কৃষকদের উৎপাদনশীলতা ১৭-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার করে ফসলের খেতের সার্বিক অবস্থার মনিটরিং, বালাইনাশক স্প্রে, সেচসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়, বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি যাচাই, জমির পরিমাণ অনুসারে শস্য রোপণও ড্রোনে করছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। ড্রোনের মাধ্যমে শস্য আবাদে জায়গার অপচয় কমানো সম্ভব। জমি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের পর বীজ বপন ড্রোনের ব্যবহার করা সম্ভব।
বাংলাদেশে ড্রোন ব্যবহার : কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার করতে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। একটি কর্মশালার মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে ড্রোনের ব্যবহার দেশে বাড়াতে হলে শুধু সরকারিভাবে ভূমিকা নিলেই হবে না। এর জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আমদানিনীতি সহজ করা প্রয়োজন। ড্রোনের ব্যবহার শুরু করতে আইনি কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করায় কৃষকের খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি সরকারের সার খাতে ভর্তুকি বেশি দিতে হচ্ছে। তাই ড্রোনের ব্যবহারের মাধ্যমে সারের ব্যবহার সঠিক মাত্রায় করতে পারলে খরচ যেমন কমে আসবে তেমনি কৃষকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। সারে ভর্তুকি কমাতে ড্রোনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সামনের দিনে উত্তম কৃষিচর্চা (জিএপি) প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়বে। এ বিষয়ে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষিপণ্যের উৎপাদনের সঠিক তথ্য পেতে ড্রোনের ব্যবহার করছে। আবার মাঠ পর্যায়ে কোন ফসলের কি অবস্থা সেটি জানতেও এ প্রযুক্তি বেশ সহায়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি নিরূপণ, সরকারি প্রণোদনা, পরিকল্পনাসহ যে কোনো উদ্যোগ নিতে হলে মাঠপর্যায়ে গবেষণা ও জরিপ চালাতে এটির ব্যবহার প্রয়োজন। সরকারিভাবে এ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে যারা এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চায় তাদের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আমদানি সহায়ক নীতি গ্রহণ করে এটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা কৃষককে কোনোভাবেই পিছিয়ে রাখতে চাই না।