লালন ফকিরের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে শেষ হলো তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আয়োজিত হয় সমাপনী আসর। ‘ধরো মানুষ রূপ নেহারে’ শিরোনামের সমাপনী আসরের শুরুতেই যন্ত্রে সাঁইজির দৈন্যবাণী পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তালিকাভুক্ত শিল্পীরা। এরপর লালন ভাববাণীগুচ্ছ নিয়ে ‘সহজ মানুষ’ শিরোনামের খন্ডনৃত্য পরিবেশন করে মেহরাজ হক তুষার ও তার দল।
অনুষ্ঠানে লালন ফকিরের ভাববাণী একক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ফরিদা পারভীন, বাউল শফি মন্ডল, সরদার হীরক রাজা, আবিদা রহমান সেতু, রাফি তালুকদার, রোকসানা আক্তার রূপসা প্রমুখ।
দেখনা মন ব্যাকমানি এই দুনিয়াদারি, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, কণ্ঠশিল্পী, জাত গেল জাত গেল বলে, কৃষ্ণপ্রেমে পোড়া দেহ, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে লালনের এসব ভাববাণীর অমিয় সুরে মিলনায়তনে মূর্ত হয়ে ওঠে লালন ফকির।
সবশেষে সমবেত কণ্ঠে মিলন হবে কত দিনে পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির তালিকাভুক্ত শিল্পীরা।
এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ।
আসিফ নজরুল বলেন, শিল্পকলা একাডেমিকে আমরা এতদিন ফিল করতাম না। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি একটি দল, একটি পরিবার ও একজন ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা তাদের হটিয়ে শিল্পকলা একাডেমিকে সর্বস্তরের মানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল তারা। এখন তাদের হাত থেকে আমাদের সংস্কৃতি মুক্ত হয়েছে। আমরা এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতির চর্চা করতে পারছি। আর বাংলাদেশের সংস্কৃতির চর্চায় যার নামটি প্রথমেই আসে তিনি মহাত্মা লালন। লালনের জীবন এক মহাকাব্যিক জীবন। মানবিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে লালনের ভাববাণী সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।