সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ চার বছরের বিরোধিতা করেছে ১২-দলীয় জোট। তারা এ দুটির মেয়াদ পাঁচ বছরের সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইলেকট্রো সিস্টেমের বিরুদ্ধে তারা। পাশাপাশি ভোটারের বয়স ১৮ বছরের নিচে না করার পরামর্শ দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টি সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ চার বছর রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যমান জাতীয় সংসদ পদ্ধতিতে আস্থা তাদের। তবে দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার বিপক্ষে তারা। এ ছাড়া নির্বাচনের সব ব্যয় নির্বাচন কমিশনকে বহন করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানান দল দুটির নেতারা। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, তাদের জোট সংবিধান সংস্কারের ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে একমত হয়েছে ৪২টিতে। একমত নয় ২৫টিতে। মতামত দিয়েছে ৩টিতে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে তারা একমত হয়েছে ১৮টিতে এবং মতামত দিয়েছে ২টিতে। বিচার বিভাগের ২৩টির মধ্যে একমত হয়েছে ১৮টিতে এবং একমত হয়নি ৫টিতে। জনপ্রশাসনের ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে একমত হয়েছে ১১টিতে একমত হয়নি ১২টিতে এবং মতামত দিয়েছে ৩টিতে। তবে সব প্রস্তাবই তারা বাস্তবায়ন চায় নির্বাচনের পর। ১২ দলীয় জোটের দাবি, অধ্যাদেশের মাধ্যমে যেসব সংস্কার করা সম্ভব সেগুলো করে নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকার করবে। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানায় তারা। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। আলোচনায় ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তাফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, রাশেদ প্রধান, লায়ন ফারুক রহমান, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাওলানা আবদুল রাকিব, আবুল কাশেম, ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন ও এম এ মান্নান। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হোসেন বাবুল জানান, একাত্তরের সঙ্গে জুলাইয়ের কোনো তুলনা করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ না হলে এই জুলাই হতো না। যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো শেষ করে নির্বাচন দিয়ে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বলেছি নির্বাচনের সব ব্যয় বহন করবে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তারা অর্থ খরচ করবে। কেন্দ্রে একটি মঞ্চ হবে এবং সেই মঞ্চ থেকেই সব দলের প্রার্থীরা বক্তব্য রাখবেন। এমনকি প্রচারপত্র তৈরি করে দেবে নির্বাচন কমিশন।’
মৌলিক জায়গায় একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে : আলী রীয়াজ
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘১৫ মের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করা হবে। ঐকমত্যের বিষয়ে আমাদের সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আমরা সব বিষয়ে একমত হতে পারব না, কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক জায়গায় আমাদের একমত হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ এ সময় কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।