দেশের স্বাস্থ্য খাত মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সে কারণে জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় সম্পর্কে শুনতে চাইবেন নীতিনির্ধারকেরা। তাই জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের আদলে প্রথমবার হতে যাচ্ছে সিভিল সার্জন সম্মেলন।
ওই সম্মেলনে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে পরামর্শ শুনবেন এবং দিকনির্দেশনা দেবেন সংশ্লিষ্টরা। ১২ মে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুই দিনের এই সম্মেলনের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। কার্য অধিবেশনগুলো স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা নানা দিকনির্দেশনা দেবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৬৪ জেলার ডিসিদের নিয়ে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলার নানা বিষয় উঠে আসে। এবার সেই আদলে ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসকদের নিয়ে প্রথমবার সিভিল সার্জন সম্মেলন হতে যাচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আগে জেলার স্বাস্থ্যসেবার সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সিভিল সার্জনরা তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সামনে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে দুজন সিভিল সার্জন বক্তব্য রাখবেন। ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে চূড়ান্ত প্রস্তুতি মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে করতে একটি কোর কমিটি এবং সাতটি উপকমিটি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ছোট পরিসরে হলেও মূলত ডিসি সম্মেলনের থিম থেকে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এটি করার জন্য বলেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সম্মেলনে দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে মানুষের অসন্তোষ ও নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে এই সম্মেলনে। এতে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর নানা কৌশল নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে জেলার স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো এই সম্মেলন হতে গেলেও সম্মেলনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, টিকা কার্যক্রম, জনবল সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা, বাজেট বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ইত্যাদি বিষয়ে সিভিল সার্জনদের মতামত উত্থাপন হবে। সূত্র জানায়, একাধিক সিভিল সার্জন নিজ জেলার অধিক্ষেত্রে উপজেলার স্বাস্থ্য সংস্কার, ডাক্তার সংকট, পরিবহন তথা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলার হাসপাতালগুলোকে শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও উঠবে সম্মেলনে।
সম্মেলনের কোর কমিটির সদস্যসচিব (যুগ্মসচিব) এ কে এম ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই সম্মেলনে স্বাস্থ্যকে ফোকাস করা হবে। আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। সম্মেলনে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১১টি কার্য অধিবেশন হবে। অধিবেশনগুলোতে খোলামেলা অলোচনা হবে স্বাস্থ্য খাতের বিষয়, সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে।