সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ রাখার বিপক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। দলটি জানিয়েছে, ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ দিয়ে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিস্থাপন করতে হবে।
গতকাল জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারীর নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদলে মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইযহার ছাড়াও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, সংগঠন সচিব মাওলানা হাফেজ আবু তাহের খান, অর্থ সচিব আলহাজ
আনোয়ারুল কবীর, দপ্তর সচিব মুফতি দীনে আলম হারুনী, প্রচার সচিব আবদুল্লাহ আল সাইফ খান এবং নির্বাহী সদস্য আমীর জিহাদী উপস্থিত ছিলেন।
দলটি জানিয়েছে, সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১-এর পরিবর্তে ১৮ বছর, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সর্বোচ্চ ২৫ সদস্যবিশিষ্ট করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মেয়াদ প্রস্তাবিত চার মাসের পরিবর্তে ৯০ দিন করা, পৌরসভা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে ওয়ার্ডকে সরাসরি উপজেলা পরিষদভিত্তিক স্থানীয় সরকারের অধীন করা, ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থার পরিবর্তে মহানগরভিত্তিক স্থানীয় সরকারব্যবস্থা কার্যকর করা, ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সরাসরি উপজেলা পরিষদের সদস্য করা, প্রতি ওয়ার্ডে একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন চায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য : এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। পাশাপাশি সংবিধান থেকে ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চায় দলগুলো। একই সঙ্গে স্বাধীনতার স্পিরিট নষ্ট হয় এমন কোনো ধারার পক্ষে তারা নয় বলে জানান। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আলোচনায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল এম এল-এর সভাপতি কমরেড হারুন চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি কমরেড আলি হোসেন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির মহাসচিব হারুন আল রশীদ খান এবং সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাক্তার সামছুল আলমসহ ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সভাপতি হারুন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রী বাম ঐক্যের চারটা দল পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, সংসদ নির্বাচন আগে হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরে হবে। অনেক দল সংসদ পরে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে, আমরা আগে সংসদ চাইছি। নির্বাচনে টাকার খেলা এবং পেশিশক্তির খেলা বন্ধ করতে বলেছি। আর দুর্নীতির কথা বলেছি, সেখানে দুর্নীতি যারা করবে রাজনৈতিক ব্যক্তি হোক আর সরকারের রাষ্ট্রপতি হোক দুর্নীতির কারণে তাদের আইনের মাধ্যমে আনতে হবে।’
গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয় নিশ্চিত হয়েছে : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গত ৫৩ বছর ধরে এ দেশের মানুষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে সংগ্রাম করেছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি বলে জনগণ এসব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত থেকেছেন। তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শাসকের পলায়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রাথমিক বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। এখন বিজয়ের লক্ষ্য পূরণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অগ্রসর হতে হবে। দুই দলের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য যেমন ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোসহ নাগরিক সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখা। এ ঐক্যকে সুদৃঢ় করে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। তিনি আরও বলেন, আমরা একটা ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণে আছি। স্বাধীনতার পর এমন সুযোগ আর কখনো আসেনি। তাই অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।