অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় এশিয়ান দেশগুলো পশ্চিমাদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, এ নির্ভরতা কমিয়ে অটিজমের চিকিৎসায় নিজস্ব উপায় বের করাতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও অ্যাডভায়জরি কমিটি ফর অটিজম অ্যান্ড নিওরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ ইন বাংলাদেশ'র চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
তিনি বলেন , 'অসচেতনতার কারণে কিছু দিন আগেও বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুকে পরিবারের জন্য দুর্ভাগ্য মনে করা হতো। কিন্তু এখন সেটা ধীরে ধীরে কমে আসছে।' অটিস্টিক শিশুদের সমাজের সম্পদে পরিণত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন সায়মা।
গত ২২-২৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় 'অটিজম কোনো ট্র্যাজেডি নয়, অজ্ঞতা মাত্র' শীর্ষক স্লোগানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং নারী, পরিবার ও যোগাযোগ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সায়মা এ কথা বলেন।
২২ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার আগে ২১ এপ্রিল নারী, পরিবার ও যোগাযোগ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন সায়মা ওয়াজেদ। সবগুলো বৈঠকেই সায়মার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার।
পৃথক বৈঠকে মালয়েশীর মন্ত্রীরা সায়মা ওয়াজেদকে জানান, সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় যেমন অটিস্টিক শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মালয়েশিয়ান এনজিও সংস্থাগুলোও।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও অটিজম ব্যবস্থাপনার জ্ঞান বিনিময়ের সম্ভাবনার ব্যাপারে নিজের মতামত তুলে ধরেন সায়মা। তার এ মতামতের প্রেক্ষিতে অটিজম ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান মন্ত্রীরা।
মালয়েশিয়ান ফার্স্ট লেডি দাতিন শ্রী রোসমাহ মনসুর পরিচালিত দাতব্য সংস্থা পারমাতা কুরনিয়ার সঙ্গে আসন্ন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারভেনশন ফর অটিস্টিক চিলড্রেন অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা ও অটিজম ইনিশিয়েটিভে কাজ করতে বাংলাদেশের উদ্যমী উৎসাহের কথা প্রকাশ করেন সায়মা।
এরপর ২২-২৩ এপ্রিল অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং সামাজিক পদক্ষেপকে উদ্বুদ্ধ করতে আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে যোগ দেন সায়মা ওয়াজেদ। তাকে উষ্ণ আতিথেয়তা জানায় মালয়েশীয় সরকার।
দাতব্য সংস্থা পারমাতা, অটিজম স্পিকস, নিউইয়র্ক ও ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর, নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবার ও সমাজ উন্নয়ন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২২ এপ্রিল আয়োজিত এ আড়ম্বরপূর্ণ সেমিনারের উদ্বোধন করেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। মেধাবী অটিস্টিক শিশুদের গানসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় পারফরম্যান্স আয়োজনকে আরও বেশি মনোমুগ্ধকর করে তোলে। পুরো দু’দিন ব্যাপী এ সেমিনারকে টানা ছয় পর্বে ভাগ করে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হয় ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায়।
মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী রোসমাহ মনসুর ছাড়াও সেমিনারে সুদান, শ্রীলংকা, কিরগিজস্তান, সিঙ্গাপুর, আলিবেনিয়া ও মরক্কোর ফার্স্ট লেডিরা অংশ নেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেইসহ বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে বক্তা ও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় মালয়েশীয় ফার্স্ট লেডির আমন্ত্রণে গালা ডিনারে যোগ দেন সায়মা ওয়াজেদ। একদল মেধাবী অটিস্টিক শিশুর নানাধর্মী পারফরম্যান্সে রঙিন হয়ে ওঠা ডিনার আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ফার্স্টলেডির গানে। অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও। ডিনারের ফাঁকে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে বিশেষ আলোচনা সেরে নেন মালয়েশীয় উপ-প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ও অটিজম বিশেষজ্ঞরা।
ডিনার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে অটিজমের ওপর বিশেষ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিশেষ শিক্ষা পরিবেশে বেড়ে ওঠা এমন কিছু প্রতিভাধর অটিস্টিক শিশু চমকে দিয়েছে মালয়েশিয়াকে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ফলাফল করে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এই বিশেষ কারণেই মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অটিস্টিক শিশুদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
গালা ডিনারে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন সায়মা।