গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের উপর নির্মিত বৌলতলী সেতু (দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ৭.৩২ মিটার) ঘিরে পাল্টে গেছে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র। সেতুটি নির্মাণের ফলে বৌলতলী, সাহাপুর, করপাড়া, সাতপাড়সহ অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের বহুদিনের যাতায়াত দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। এখন আর কাউকে খেয়াঘাটে মাঝির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রোগী বা শিক্ষার্থী পরিবহনের বিড়ম্বনাও নেই।
বৌলতলী সেতু গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে এসব এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। ফলে কৃষক, জেলে, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রায় এসেছে গতি ও স্বস্তি।
গোপালগঞ্জ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ জুলাই। মূল চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও সময়সীমা বাড়ানোর কারণে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে কাজ শেষ হয়। সংশোধিত ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের জন্য দেওয়া হয় ৫ কোটি টাকা। এলজিইডি জানিয়েছে, সেতুটি নির্মাণের ফলে গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া, ফুকরা, ওড়াকান্দি, রাজপাটসহ বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষ অল্প সময়ে কম খরচে যাতায়াত করতে পারছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নদীর দুই পাড়ের যোগাযোগ ছিল শুধুই খেয়াঘাটনির্ভর। এতে সময় ও শ্রম অপচয়ের পাশাপাশি নানা হয়রানি হতো। এখন গ্রাম থেকেই গাড়িতে করে স্কুল, কলেজ, হাটবাজার এমনকি হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “বৌলতলী সেতু না থাকায় বহু বছর আমরা যোগাযোগ বঞ্চিত ছিলাম। এখন যেন স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখছি।”
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, “যেকোনো এলাকায় সড়ক বা সেতু নির্মিত হলে মানুষের জীবনমান বদলে যায়। বৌলতলী সেতুর মাধ্যমে অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ এখন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন।”
এখন কৃষকরা সহজে পণ্য পরিবহন করে বেশি লাভবান হচ্ছেন, জেলেরা মাছ বাজারজাত করছেন কম সময়ে। চিকিৎসা ও শিক্ষার সুবিধাও দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে। জমির দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক