দেশের ৮৮ শতাংশ নিম্নআয়ের মানুষ প্রতিদিন অন্তত এক বেলা পাউরুটি-বিস্কুট খান। ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসিক আয়ের মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশই সময়ের অভাব ও বাড়তি দামের কারণে সকালের খাবার বাদ দেন। ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। দেশের ১৫টি স্থানের ১ হাজার ২২ জন মানুষের ওপর এই জরিপ করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ইসেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটের মতো পণ্যে ভ্যাট থাকা উচিত কি উচিত নয়, এটা নিয়ে মৌলিক বিতর্ক থাকবেই। এটা একটা নীতিগত বিষয়। ট্যাক্স পলিসি নিয়ে যখন কাজ করি তখন অনেকগুলো বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হয়। আমাদের ট্যাক্স আদায়েরও একটা টার্গেট মাথায় থাকে যে আগামী বছর বাজেট করার জন্য আমাদের এই পরিমাণ টাকা আদায় করতে হবে।
দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না, এমন ইঙ্গিত দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম বাজেটের আকার কমেছে। লক্ষ্য ছিল, মানুষের ওপর যেন চাপ না পড়ে। বাজেটের আকার যতটা ছোট হয়েছে... ধরে নিতে হবে, রাষ্ট্র ততটা সঞ্চয় করেছে, ততটা ঋণের চাপ কমেছে।
আবদুর রহমান খান আরো বলেন, করনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। একদিকে যেমন রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্য থাকে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার শর্ত পূরণের তাগিদও মাথায় রাখতে হয়। আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে দেশের বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে শুল্কহার কমিয়ে আনা অন্যতম। বর্তমানে দেশের কিছু পণ্যে সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক কমাতে হবে ধাপে ধাপে। তা না হলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পাউরুটি ও বিস্কুটে ভ্যাট বাড়ানো হলেও এই বাড়তি ভ্যাট ব্যবসায়ীরা নিজেরা বহন না করে পুরো বোঝা ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কিনা, সে বিষয়েও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের কর যেখান থেকে নেওয়ার কথা, সেখান থেকে নিতে পারলে কিছু ক্ষেত্রে সহজেই করছাড় দেওয়া যেত।
বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা বলেছি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে কোনো ভ্যাট থাকা উচিত নয়। বরং এই ভ্যাট অন্য কোনো খাত থেকে সংগ্রহ করা হোক। যদি সরকার ভ্যাট নিতে চায় তাহলে তা ৩ শতাংশে সীমিত রাখা উচিত ছিল। আমি এবারের বাজেটে ৩ শতাংশ ভ্যাটের সুপারিশ করেছিলাম। আমার সেই প্রস্তাবের সঙ্গে এফবিসিসিআইও একমত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রাখা হয়নি, বরং ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্কের গবেষণাপ্রধান ইমরুল হাসান বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের বেশি এবং যুব বেকারত্ব ও আয়ের বৈষম্য রয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এই পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষসহ শিক্ষার্থীদের বাড়তি দামে খেতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের ৭০ শতাংশেরই প্রত্যাশা ছিল, এই বাজেটে এসব পণ্যর ওপর থেকে ট্যাক্স নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসবে। তবে এ নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ