২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক। এরপর ২৫ বছর পেরিয়েছে। দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ এখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ। দশম টেস্ট দলের মর্যাদা পায় ২৬ জুন, ২০০০ সালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সপ্তাহব্যাপী টেস্ট অভিষেকের রজতজয়ন্তী পালন করেছে। অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়া করেছেন। সাবেক অধিনায়ক পাইলট মনে করেন, টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেট যতটা এগোনো দরকার ছিল, পরিকল্পনার অভাবে ততটা এগোয়নি। ৪৪ টেস্ট ক্যারিয়ারে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১৪০৯। উইকেটরক্ষক হিসেবে ক্যাচ নিয়েছেন ৭৮টি ও স্ট্যাম্পিং করেছেন ৯টি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য পাইলটের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আসিফ ইকবাল
অভিষেক টেস্টের আগের রাতে আপনার কেমন লাগছিল?
খালেদ মাসুদ পাইলট : সারারাত ঘুমাইনি। ঠিক ঘোর নয়, অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরা ছিল রাত আমার। ভালো লাগছিল এই ভেবে, আমরা টেস্ট খেলব। আমরা টেস্ট খেলুড়ে দেশ হব। পরের দিন মাঠে নামার পর স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখে একটু চাপ বোধ করেছিলাম। দিনটি পার হওয়ার পর আমার শরীর ছেড়ে দেয়। এরপর সারারাত ঘুমিয়েছিলাম।
পুরো দলের আবহটা বলবেন?
খালেদ মাসুদ পাইলট : ভীষণ আনন্দঘন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল দলের মধ্যে। কারণ আমরা এর আগে কখনোই টেস্ট খেলিনি। সেজন্য টেনশনেও ছিলাম। তবে প্রথম দিনে বুলবুল ভাইয়ের সেঞ্চুরির পর আমরা অনেক রিলাক্সে ছিলাম।
অভিষেক টেস্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের ইনিংসটি...
খালেদ মাসুদ পাইলট : অবিশ্বাস্য একটি ইনিংস খেলেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই। তার সেঞ্চুরিটি আমাদের ক্রিকেটের জন্য একটি দিকনির্দেশনা ছিল। একটি মেসেজ ছিল। তার ১৪৫ রানের ইনিংসটি ক্রিকেট বিশ্বকে জানিয়েছিল, আমরা পারি, আমরা পারব। একটি টেস্ট সেঞ্চুরি করতে যে একাগ্রতা ও ধৈর্য দরকার, তার পুরোটাই দেখিয়েছিলেন বুলবুল ভাই।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কোথায় দেখতে চান?
খালেদ মাসুদ পাইলট : প্রথম টেস্ট খেলার পর গত ২৫ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের যেখানে পৌঁছানোর কথা, সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। অবশ্য ব্যক্তিগত পারফর্মার ও পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে। আমি মনে করি, এ সময়ের মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের কাছাকাছি থাকা উচিত ছিল। অথচ পারিনি। কেন পারিনি? অনেক কারণ। ক্রিকেটাররাও অনেকাংশে দায়ী, এগোতে না পারার জন্য। জাতীয় দলে ২-৩ বছর খেলার পর একজন ক্রিকেটার আর্থিক সচ্ছলতা পেয়ে যায়। তখন তারা রিলাক্স হয়ে যায়। এ ছাড়া পাইপলাইনে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার মতো তেমন ক্রিকেটার নেই। আমাদের কোনো রোহিত শর্মা নেই, বিরাট কোহলি নেই। এরা আরও খেলতে পারতেন। অথচ পারফরম্যান্স করে এদের চাপে রাখছিলেন শুভমান গিল, ইয়াশভি জয়সোয়ালের মতো ক্রিকেটাররা। আমাদের ক্রিকেটারদের স্বপ্ন নেই, চ্যালেঞ্জ নেই। আমার ধারণা, কোনো ক্রিকেটারই বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। ক্রিকেটার ছাড়া ক্রিকেট বোর্ডের দোষটাই বেশি। কারণ তাদের সঠিক পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে। ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের মতো ক্রিকেটার উঠে আসছে না। ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। আমি স্বপ্ন দেখি টেস্টে বাংলাদেশ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করুক। বিশ্বসেরা ক্রিকেটার উঠে আসুক।
বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটার কে?
খালেদ মাসুদ পাইলট : বলা কঠিন। মুমিনুল হকের ১৩টি সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের ১২টি, তামিম ইকবালের ১০টি সেঞ্চুরি রয়েছে। কিন্তু তারা ধারাবাহিক নন। আসলে আমাদের ব্যাটারদের কারও ধারাবাহিকতা নেই। তাই আমি বলতে পারব না সেরা টেস্ট ব্যাটার কে।
সেরা টেস্ট বোলার?
খালেদ মাসুদ পাইলট : প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ভয় দেখানোর মতো আমাদের কোনো বোলার নেই। তারপরও আমি বলব সব মিলিয়ে সাকিব আল হাসানই সেরা। সে এমন একজন ক্রিকেটার, যার উপস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটটাই পাল্টে গেছে। লিওনেল মেসি যেমন পুরো আর্জেন্টিনাকে বদলে দিয়েছেন। মেসির মতোই দলে ভূমিকা রাখেন সাকিব। সে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- সব কিছুতেই নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ইনিংস কোন ক্রিকেটারের?
খালেদ মাসুদ পাইলট : অনেকের অনেক ইনিংস রয়েছে। মুশফিক, সাকিব, তামিমরা ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। কিন্তু আমার দেখা আমাদের সেরা টেস্ট ইনিংস বুলবুল ভাইয়ের ১৪৫ রান। ওই ইনিংসটির আগে বুলবুল ভাইয়ের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। কঠিন পরীক্ষা ছিল। একটা সেঞ্চুরি করতে যে দৃঢ় মানসিকতার দরকার ছিল, বুলবুল ভাই সেই দৃঢ়তায় সেঞ্চুরি করেছিলেন।
সেরা বোলিং স্পেল?
খালেদ মাসুদ পাইলট : বলা অনেক কঠিন। আমি মনে করি অপ্রতুল সুযোগসুবিধার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে আমাদের অভিষেক টেস্টে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের বোলিংটাই (৬/১৩২) সেরা।
বাংলাদেশের সেরা টেস্ট জয় কোনটি?
খালেদ মাসুদ পাইলট : টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের সেরা জয় ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। তবে কোনো জয়কেই খাটো করে দেখছি না। জয় সবসময়ই মধুর।
আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার...
খালেদ মাসুদ পাইলট : শুধু টেস্ট নয়, আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়েই সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলাম। বিশ্বকাপ খেলেছি। একজন ক্রিকেটারের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।