গুলশানের যে বাড়িতে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি থাকছেন, সেই সম্পত্তির যাবতীয় নথি তলব করেছে হাইকোর্ট। আদেশ প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান এবং সালাম মুর্শেদীকে অ্যাফিডেভিট আকারে সব নথি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, রিট আবেদন থেকে দেখতে পাচ্ছি যে বাড়িটি গৃহায়ণ ও গণপূর্তের মালিকানাধীন। কিন্তু সেই সম্পত্তি কীভাবে রাজউক ব্যক্তির নামে নামজারি ও দলিল সম্পাদনের অনুমতি প্রদান করেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে নথি আসুক সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখতে চাই। এরপরই হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করে। রুলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, দুদক চেয়ারম্যান, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১৩ নভেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছে আদালত।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপির বিরুদ্ধে গুলশানে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগ এনে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ঐ রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এ ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকায় লিপিবদ্ধ থাকার পরেও সালাম মুর্শেদী বাড়িটি দখল করে সেখানে বসবাস করছেন। পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে অবমুক্ত না হওয়ার পরও উনি কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন সেই বিষয়ে রাজউকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দুটি চিঠি দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু ঐ চিঠির কোনো জবাব দেয়নি রাজউক। এরপর চলতি বছর পুনরায় ঐ মন্ত্রণালয় থেকে রাজউককে চিঠি দেওয়া হয়। ঐ চিঠিতে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়ি অবমুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও নামজারি ও দলিল সম্পাদন করার জন্য মুর্শেদীকে রাজউক কীভাবে অনুমতি প্রদান করেছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু রাজউক থেকে কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি।
রিটে আরও বলা হয়, উনি একজন সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের সহায়তায় ঐ বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলে রেখেছেন। তাই এ বিষয়ে অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন।
রিটের পূর্বে দুদককে অনুসন্ধানের জন্য আবেদন দিয়েছিলেন রিটকারী। কিন্তু দুদক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে এ রিট করা হয়। রিটের পক্ষে রিটকারী নিজেই, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।
দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত রুল জারি করেছে। প্রয়োজনীয় নথি দাখিল করতে বলেছে। আমি আদালতে বলেছি, যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন সেহেতু এখনই দুদক অনুসন্ধান শুরু করতে পারবে না। শুধু সালাম মুর্শেদী কেন, দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত