১৭ বছরের কিশোর মো. রায়হান। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় সে। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। বাবা পেশায় দিনমজুর।
রায়হানকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল মা-বাবার। নিজেদের বৃদ্ধ বয়সে সংসারের হাল ধরবে ছেলে—এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন মা-বাবা। তাঁদের সেই স্বপ্ন গুলিতে বিদ্ধ হয়ে অকালেই ঝরে গেছে। গত ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় গণমিছিলে যোগ দেয় পটুয়াখালীর রায়হান।
কিছুক্ষণ পরই গুলিবিদ্ধ হয়। কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে মামাতো ভাই কাওসার আকন পাগলের মতো ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যান। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তার মরদেহ শনাক্ত হয়। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মা-বাবার স্বপ্নকে কবরে রেখে আসে এলাকাবাসী।সম্প্রতি সহানুভূতি জানাতে ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে সেই রায়হানের বাড়িতে যান বসুন্ধরা শুভসংঘ পটুয়াখালী জেলা শাখার বন্ধুরা। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের জন্য এক মাসের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন। পরবর্তী সময়ে এই পরিবারটির পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ—এমন আশ্বাস দেন তাঁরা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া এলাকার রায়হানদের বাড়িতে অনেক পথ কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। চালের বস্তা কাঁধে নিয়ে অতটুকু কাদা মাখানো পথকে তোয়াক্কাই করেননি বসুন্ধরা শুভসংঘ বন্ধুরা।
মানবিক সহায়তা নিয়ে তাঁরা হাজির হয়েছিলেন নিহত রায়হানের বাড়িতে।
সন্তানের শোকে নির্বাক মা-বাবা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে, রায়হানের নানা ঘটনার কথা শুনে চোখের পানি ফেলেন সংগঠনটির সদস্যরা। নিজের মা-বাবার মতোই জড়িয়ে ধরেন রায়হানের মা-বাবাকে। সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ বন্ধুদের কাছে পেয়ে আবেগাক্রান্ত হন রায়হানের বাবা। তিনি বলেন, ‘কী দোষ ছিল আমার পোলাডার? হ্যারে বড় হইতে দিলো না। আমার বাবাডারে দুইটা গুলি করছে। পা-টা ঝুলে ছিলো। আমার বাবার কী দোষ ছিলো। কেন আমারে সন্তানহারা করা হলো? এহন কার মুখে বাবা ডাক শুনবো।’