রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচে বৃদ্ধ দম্পতির বসবাস

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হাফিজুর রহমান (৬৮) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৬২) নামের এক বৃদ্ধ দম্পতির পরিবারকে বসতভিটা থেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। এ ঘটনার পর পরিবারটি প্রচ- শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও উচ্ছেদের বিষয়ে বোয়ালমারীর ময়না ইউনিয়নের ইউপি সদস্যসহ ২৮ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ময়না ইউনিয়নের বর্ণিচর গ্রামের বৃদ্ধ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে বেশ কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটে। ১১ জানুয়ারি সকালে বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দেড় শতাধিক ব্যক্তি হামলা চালায়। মধ্যযুগীয় কায়দায় এ হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি ঘরের ইট পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়। হামলার সময় বৃদ্ধ দম্পতির বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় আধাপাকা একটি ঘর ও দেয়াল। এ সময় হামলাকারীদের বাধা দিলে তারা বৃদ্ধ হাফিজুর ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগমকে মারধর করে। পরে প্রভাবশালী মহলটি নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে বৃদ্ধ দম্পতিকে। হামলার ঘটনার পর বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই বৃদ্ধ দম্পতি খোলা আকাশের নিচে মানবেতরভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

হামলার ঘটনার দুই দিন পর বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসানসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে বোয়ালমারী থানায় একটি মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত হাফিজুর রহমান। এ ঘটনায় আসামি সেলিম শেখ, সাহেব আলী ও মো. লিটনকে আটক করে পুলিশ। মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী বৃদ্ধ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকেই জমিটি আমাদের ভোগদখলে। ছয় মাস আগে ঘর তুলে আমরা এখানে বসবাস শুরু করি। আমাদের ১১ শতাংশ জমির মধ্যে বিএস রেকর্ডে মোতালেব শরীফের ছেলে অহম ও তহম শরীফ রেকর্ড করে নেন। রেকর্ড শর্তে এ জমির সাড়ে পাঁচ শতাংশ বানিয়াড়ী গ্রামের সাহেব আলী ও সাড়ে ৫ শতাংশ ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল ইসলামের কাছে অহম ও তহম বিক্রি করে দেন। এর বিরুদ্ধে ফরিদপুর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এর পরও জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করতে জোরপূর্বক পেশিশক্তি ব্যবহার করে হাসিবুল ও আলাউদ্দীন মেম্বার তার লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। বর্তমানে আমরা প্রচ- শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ‘ওই জমিটা আমার দুই চাচার। এ নিয়ে আদালতের মামলার রায় অনুযায়ী ঢোলডগর বাজিয়ে লাল নিশানা গেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হাফিজুর মোল্যা গংরা আইন না মেনে জমিটি জবরদখল করে কিছুদিন আগে কয়েকখান ইট দিয়ে ছাপরা দেয়। চাচা ও আমার জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক উত্তম কুমার সেন জানান, ঘর ভাঙার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার পরপরই তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর