১১ বছর আগে সংসারের অভাব-অনটনের কারণে শিশুকন্যা কাঞ্চনমালাকে এক পরিচিতজনের মাধ্যমে ঢাকার একটি বাসায় কাজ করতে পাঠান দিনমজুর আলমগীর ম ল। সেটি ২০১২ সালের কথা। তখন কাঞ্চনমালার বয়স মাত্র ছয় বছর। কষ্ট সইতে না পেরে কিছুদিন পর আগারগাঁও এলাকার সেই বাসা থেকে পালিয়ে যায় সে। সেদিন পথের ধারে শিশুটিকে কাঁদতে দেখে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের প্রবাসী দেওয়ান আবু ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী কাঞ্চনমালাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। দীর্ঘ ১১ বছর শিশুটিকে তিনি মাতৃ¯েœহে লালন পালন করেন। কাঞ্চনমালা ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের আলমগীর হোসেন ম লের মেয়ে। স্থানীয় বেসরকারি একটি এজেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুর রহমানের মাধ্যমে গত বুধবার সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের কাছে ফেরে কাঞ্চনমালা। এখন তার বয়স ১৭ বছর। দীর্ঘ ১১ বছর পর বাবা, মা ও সন্তানের মিলনে তাদের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুর রহমান জানান, তার এক সহকর্মী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ওই এলাকায় কাজ করেন। কাঞ্চনমালার পালক পিতা-মাতা তার পরিচিত। তারা মেয়েটির বাড়ি হরিণাকুন্ডু জানালে তাদের সঙ্গে আমাকে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন। আসাদুর রহমান আরও বলেন, আমি মেয়েটির কাছে তার গ্রামের নাম জানতে চাইলে হরিণাকুন্ডু, বোয়ালমারী ও বোয়ালখালী ছাড়া আর কিছুই বলতে পারে না।
আমাদের এখানে বোয়ালিয়া নামে একটি গ্রাম আছে। আমি ওই বোয়ালিয়া গ্রামে গিয়ে মানুষের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আলম ম ল নামে এক দিনমজুরের মেয়ে ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে অনেক বছর আগে হারিয়ে গিয়েছে। পরে আমি ওই পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে গত ২৮ মার্চ মেয়েটির বাবা-মাকে নিয়ে মানিকগঞ্জে যাই। মেয়েটি বাবা-মাকে চিনতে পেরে তাদের জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
কাঞ্চনমালার পালক মা সুরাইয়া দেওয়ান জানান, তাদের তিনটি ছেলে সন্তান আছে। কোনো কন্যা সন্তান না থাকায় মেয়েটিকে তিনি মায়ের আদরে লালন-পালন করেছেন। ওকে স্কুলেও দিয়েছিলেন। কিন্তু সে পড়ালেখা করেনি। তাকে মা বলেই ডাকত সে। সুরাইয়া খাতুন বলেন, কাঞ্চনমালাকে পাওয়ার পরই আমরা তার ঠিকানা খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছি। ও শুধু হরিণাকুন্ডু আর বোয়ালমারী বা বোয়ালখালী নাম ছাড়া কিছু বলতে পারে না। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে ওর ঠিকানা খুঁজে পাই। মেয়েকে ছাড়তে কষ্ট হলেও নিজের আপন ঠিকানায় ফিরতে পারায় খুশি সুরাইয়া দেওয়ান ও তার পরিবার।
কাঞ্চনমালা জানান, কোনোদিন ভাবিনি নিজের বাবা-মা ও বোনদের খুঁজে পাব। আজ আমি নিজের ঠিকানায় ফিরেছি। এটা আমার জন্য বড় আনন্দের। আর যারা আমাকে লালন-পালন করেছেন তারাও খুব ভালো। আমাকে তারা নিজেদের মেয়ে মনে করতেন।
কাঞ্চনের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, আমার চার মেয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়েটি অনেক বছর আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কাঞ্চন তাদের দ্বিতীয় সন্তান। অভাব-অনটনের কারণে তাকে ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ১১ বছর তার কোনো খোঁজ পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ আমার মেয়েকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার সন্তানকে মা-বাবার ¯েœহে লালন-পালন করায় মানিকগঞ্জের ওই দেওয়ান দম্পতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।