মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ হাইকমিশন নয়াদিল্লিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, প্রভাতফেরি, ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, দূতাবাস প্রাঙ্গনে নির্মিত একুশের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ দূতাবাসের ‘বঙ্গবন্ধু হল’ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
দিবসের শুরুতে দূতাবাস প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করা হয়। দূতাবাসের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ করেন। এ সময়ে ভারতে সফররত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ও তার সফরসঙ্গীসহ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল এমপি, এডভোকেট আবিদা আনজুম মিতা এমপি, মনোরঞ্জন গোপাল এমপি, দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ এবং দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
মাতৃভাষা দিবসের প্রভাত ফেরিতে দূতাবাসের হাই কমিশনারের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপিসহ তার সফরসঙ্গীরা ও দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সময়ে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে ভাষা সংগ্রামের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সমস্বরে উচ্চারিত হয়।
পরে দূতাবাসের ‘বঙ্গবন্ধু হল’ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রেরিত বাণি পাঠ করে শোনানো হয়। দূতাবাসের উপ-হাইকমিশনার নুরল ইসলাম রাষ্ট্রপতি ও মিনিস্টার প্রেস শাবান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ও হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান বক্তব্য দেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভাষা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা পেয়েছি তারা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তিনি জাতিসংঘের অবদানকে তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কারণেই আজ বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা ও বাঙালি এক অনন্য উচ্চতায়। শেখ হাসিনা আজ উন্নয়ন ও নেতৃত্বের প্রশ্নে বিশ্বের রোল মডেল।
হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান বলেন, বাহান্নের ভাষা আন্দোলন একটি সংগ্রামী ও বীরত্বগাঁথা ইতিহাস, আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। তিনি ভাষা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক অবদানের কথাও তুলে ধরেন।
পরে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের নিজস্ব পরিবেশনায় ভাষা দিবসের তাৎপর্য ধারণ করে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকালের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
বিকালের অনুষ্ঠানে অংশ নেন নয়াদিল্লিত অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের বিশিষ্টজন, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ। আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান। পরে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক দোয়া মাহফিল ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এ সময়ে মহান ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়।