১৯৮৬ সালের পরমাণু দুর্ঘটনার ফলে চেরনোবিলে এখনো উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা বিরাজ করছে। এটা মানবজাতির জন্য এক বিপজ্জনক স্থান। তবে মানুষ যতটা এ অঞ্চল এড়িয়ে চলে, প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ২,৬০০ বর্গকিলোমিটারের চেরনোবিল নিষিদ্ধ অঞ্চল (Chernobyl Exclusion Zone - CEZ) যেন ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে প্রাণীদের অভয়ারণ্যে।
সম্প্রতি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সোফিয়া টিন্টোরির নেতৃত্বে একদল গবেষক সেখানে ছোট্ট কৃমি (নেমাটোড) নিয়ে গবেষণা করেন। বিস্ময়করভাবে দেখা যায়, এই কৃমিগুলোর মধ্যে তেজস্ক্রিয়তার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই।
গবেষক দল চেরনোবিল থেকে নেমাটোড সংগ্রহ করে দেখতে পান, তারা কঠিন পরিবেশেও টিকে থাকার মতো অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করেছে। এই প্রজাতির সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন অঞ্চলেও তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, যেখানে অন্য প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, নেমাটোডের ডিএনএতে তেজস্ক্রিয়তার কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি। এমনকি প্রজন্মান্তরের ভিত্তিতে এই কৃমিগুলোর তেজস্ক্রিয়তা সহনশীলতার মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
গবেষকরা আশা করছেন, এই কৃমির ডিএনএ মেরামত প্রক্রিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ভবিষ্যতে তা মানব ডিএনএ মেরামতের প্রযুক্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা ক্যানসারের ঝুঁকি বোঝার নতুন পথ খুঁজে পেতে পারেন। সোফিয়া টিন্টোরি বলেছেন, চেরনোবিল ছিল এক বিশাল ট্র্যাজেডি। তবে এটি স্থানীয় প্রাণীজগতে কী প্রভাব ফেলেছে, তা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। হঠাৎ পরিবর্তিত এই পরিবেশ কি এমন প্রজাতি নির্বাচন করেছে যারা তেজস্ক্রিয়তা প্রতিরোধে সক্ষম?
নেমাটোডের সহজ জেনোম ও স্বল্প জীবনচক্রের কারণে এদের বহু প্রজন্ম নিয়ে গবেষণা করা সহজ হয়েছে। চেরনোবিলের কৃমির ডিএনএ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের কৃমি—যেমন ফিলিপাইন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, মরিশাস ও অস্ট্রেলিয়ার কৃমির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের প্রতিরোধ ক্ষমতা পৃথক হতে পারে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন, কেন কিছু মানুষ ক্যানসারের মতো ডিএনএ ক্ষতিসংক্রান্ত রোগে তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
এই গবেষণার ফলাফল Proceedings of the National Academy of Sciences জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার মানবজীবনের জন্য বড় একটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল