শিরোনাম
রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অপকর্মের শাস্তি পেলেন সাব্বির

মোসাদ্দেক হোসেনকে কেবল সতর্ক করা এবং নাসিরকে না ডাকা প্রসঙ্গে ইসমাইল হায়দারের ভাষ্য, ‘মোসাদ্দেকের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে আমরা তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অপকর্মের শাস্তি পেলেন সাব্বির

ক্রিকেটার সাব্বির রহমান —ফাইলফটো

বিকাল পাঁচটা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দ্বিতীয় তলায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মিডিয়াকর্মীরা। শুনানি শেষে বিষণ্ন্ন মুখে বেরিয়ে এলেন সাব্বির রহমান। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বললেন না। কিন্তু জাতীয় দলের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের হতাশাগ্রস্ত মুখচ্ছবি দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না যে তিনি বড় শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

মিনিট কয়েক পরেই মিডিয়ার মুখোমুখি হয় বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি। জানানো হয়, সাব্বির রহমানকে ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। আরেক ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেনকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। নাসির হোসেনকে শুনানিতে ডাকার কথা থাকলেও তাকে ডাকা হয়নি। যেহেতু এই ক্রিকেটার এখন ইনজুরিতে এবং জাতীয় দলের বাইরে পড়ে সুবিধা মতো সময়ে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

শৃঙ্খলা কমিটি কোনো ক্রিকেটারকে শাস্তি দিতে পারেন না। কেবল শুনানি করে শাস্তির বিষয়ে বোর্ড সভাপতির কাছে সুপারিশ করতে পারে। সে কাজই করেছে শৃঙ্খলা কমিটি। তবে আজ বিসিবি সভাপতি অনুমোদন দিলেই শাস্তি কার্যকর হবে সাব্বিরের। তবে এসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। বোর্ড সভাপতির অনুমোদনের বিষয়টি কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে গতকাল বিসিবির পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘আজ (গতকাল) দুটি শুনানি ছিল। বোর্ড সভাপতি বরাবর আমরা সুপারিশ দেব। তিনি অনুমোদন দিলেই এটি কার্যকর হবে। সাব্বিরের শুনানিতে যা হয়েছে, ওকে আমরা ছয় মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছি।’

সাব্বিরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য। গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম দুই ওয়ানডে মিলে মাত্র ১৫ রান করলে তার ফর্ম নিয়ে সমালোচনা করে এক ক্রিকেটপ্রেমী স্ট্যাটাস দেন। সেই ভক্তকে সাব্বিরের অ্যাকাউন্ট থেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এসএমএস দেওয়া হয়- যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এছাড়া আরও বেশ কয়েক অভিযোগ রয়েছে এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। যে অভিযোগগুলো সাব্বির নাকি স্বীকার করেও নিয়েছেন। নিজের বিতর্কিত কার্যকলাপের জন্য তিনি অনুতপ্তও হয়েছেন নাকি।

সাব্বিরের শাস্তি সম্পর্কে ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘সম্প্রতি ফেসবুকের একটা বিষয় নিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ও অবশ্য বলছে, ওর আইডি হ্যাকড হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমরা এটা যাচাই করতে পারছি না। তবে তার সর্বোপরি কার্যকলাপ বিবেচনা করে শাস্তিটা দেওয়া হয়েছে। আগের ঘটনায় সে তো শাস্তি পেয়েছেই।’

জাতীয় লিগে ম্যাচ চলাকালে এক দর্শককে মারধর এবং আরও কয়েকটি বিতর্কিত কার্যকলাপের জন্য গত জানুয়ারিতে সাব্বিরকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় মাস নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। যে শাস্তি এখনো ভোগ করছেন তিনি। সেই শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলেন এই ক্রিকেটার।

এই শাস্তি থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে সাব্বিরের সামনে, এমন কথাই জানালেন ইসমাইল হায়দার, ‘ভবিষ্যতে এমন আর কোনো কার্যকলাপ যদি নজরে আসে, তাহলে লম্বা সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে সাব্বির। নিজেকে সংশোধন না করলে বড় শাস্তি সে পাবেই।’

এশিয়া কাপের দলে তো সাব্বিরের জায়গা হয়নি। তিনি খেলতে পারবেন না জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজেও। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ না করার কারণে সামনের বিপিএলে খেলতে কোনো সমস্যা নেই সাব্বিরের। শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করার সুপারিশের পেছনে যুক্তিও আছে শৃঙ্খলা কমিটি, যাতে নিজেকে সংশোধন করার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে ফর্ম ও ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন তিনি। যাতে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে সমস্যা না হয়।

মোসাদ্দেক হোসেনকে কেবল সতর্ক করা এবং নাসিরকে না ডাকা প্রসঙ্গে ইসমাইল হায়দারের ভাষ্য, ‘মোসাদ্দেকের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে আমরা তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে সে যদি দোষী প্রমাণিত হয় তখন তো শাস্তি পাবেই। কিন্তু এখন আমরা তাকে সতর্ক করেছি। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। কেননা তারা অনেকের রোল মডেল। তাই ক্রিকেটারদের কোনো বিতর্কিত কিছু করার আগে ভাবা উচিত। আর নাসির এখন দলেও নেই, আবার ইনজুরিতে। সে যেহেতু ক্রিকেটের মধ্যে নেই তাকে এখন ডেকে কি লাভ। পরে তাকে ডেকে সতর্ক করা যাবে।’

সর্বশেষ খবর