রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাইগারদের মোমেন্টামে ফেরা!

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের মোমেন্টামে ফেরা!

মোমেন্টাম-টার্মটা ক্রিকেটে খুবই জনপ্রিয়! বড় দলগুলোও মাঝেমধ্যে হতাশার জালে আটকে যায়। তখন দরকার হয় একটি জয়ের। দরকার হয়  মোমেন্টামের! বাংলাদেশ একটি জয় পেয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ধুঁকতে ধুঁকতে জয়। এমন জয়ের পর বাংলাদেশও খুঁজে পেয়েছে মোমেন্টাম। এখন আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই! সত্যিই কি তাই? বিশ্বকাপে মোমেন্টাম হারানোর পর বাংলাদেশ দল যে মনস্তাত্বিক বাধায় আটকে গিয়েছিল সেই ধাক্কায় শ্রীলঙ্কা সফর ও আফগানদের বিরুদ্ধে একমাত্র  টেস্টেও হার। মাঠের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের  চেনাই যাচ্ছিল না! এই দলটিকে নিয়েই কি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন সমর্থকরা? সাম্প্রতিক টাইগারদের খেলা দেখে কখনো কখনো মনে হচ্ছিল  যেন, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, সৌম্যরা দলে  নেই। যেন তাদের জার্সি পরে অন্য কেউ খেলতে নামছে!

দেশের সেরা ক্রিকেটাররা কিভাবে এতোটা ‘হতশ্রী’ ক্রিকেট খেলেন? দলে চিরচেনা সেই উজ্জীবিত ভাবটা আর নেই। মনে হচ্ছে যেন এই বাংলাদেশ ২০ বছর আগের সেই দল, যে দলটি ম্যাচে নামার আগেই হেরে বসে থাকত, যারা তাকিয়ে থাকত ভবিষ্যতে কিছু করার। নিজেদের ব্যর্থতার ক্ষতে প্রলেপ দিতে যারা তাকিয়ে থাকত পরের প্রজন্মের দিকে!

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বটে! কিন্তু এই জয়ে কোনো আনন্দ নেই। এই জয়ে কোনো প্রাণ নেই। হয়তো প্রত্যাশাও নেই! জিম্বাবুয়ের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দেশের  সেরা ৬ ব্যাটসম্যান দলীয় ৬০ রানেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন, সে দলকে নিয়ে আর কতইবা আশা করা যায়! বাংলাদেশ জিতেছে সপ্তম উইকেটে দুই তরুণ তারকা  মোসাদ্দেক ও আফিফের ৮২ রানের জুটির সুবাদে। হ্যাঁ, মনে হতেই পারে মোসাদ্দেক ও আফিফ তো দলেরই অংশ। আর জয়ের জন্য কাউকে না কাউকে  তো হাল ধরতেই হয়। কিংবা এটাও মনে হতে পারে অনেকের, ক্রিকেটে উত্থান-পতন আছে! তাই বলে এতোগুলো সিনিয়র ক্রিকেটার এভাবে একসঙ্গে আত্মহুতি  দেবেন? হ্যাঁ, আত্মাহুতিই বলা যায়! জিম্বাবুয়ের বোলাররা কি খুবই উঁচুমানের? তাদের বিরুদ্ধেই তো আমাদের নাভিশ্বাস বেড়িয়ে পড়লো। অথচ টি-২০ র‌্যাঙ্কিং জিম্বাবুয়ে ১৪ নম্বর দল। বাংলাদেশও যে টি-২০তে ভালো তা নয়। কিন্তু অভাব-অনটন ও নানামুখীয় সমস্যায় বিপর্যস্ত দলটির বিরুদ্ধে এভাবে ভেঙে পড়লো কেন বাংলাদেশ? দায়িত্বশীলরা কি এ বিষয়ে দৃষ্টি দিচ্ছেন, নাকি?

আজ বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তান। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর এক দল। সত্যিকারের ‘টিম-স্পিরিট’ নিয়ে খেলা এক দল। যোদ্ধা এক দল। দুর্দান্ত এক ব্রিগেট! ক্রিকেটের নবীন এই দলটি এখন বাংলাদেশের কাছে সুপার পাওয়ার এক প্রতিপক্ষ!

টি-২০ ক্রিকেটে তারা বরাবরই ভালো। র‌্যাঙ্কিংয়েও ৭ নম্বরে। যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশটি নিজের দেশে খেলতে পারেন না, অনুশীলনের জন্য অন্য যাদের তাকিয়ে থাকতে হয় অন্যের দিকে। হয়তো ক্রিকেটাররাও যে টাকা পান তা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তুলনায় খুবই নগণ্য। তারপরও সেই দলটি তরতর করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হাজারও সুবিধা ভোগ করেও দিন দিন দলকে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত করছেন দলকে।

গত বছর বাংলাদেশ ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের একটি টি-২০ সিরিজ খেলেছিল আফগানদের বিরুদ্ধে। সেই সিরিজে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় টাইগারদের! না, ঠিক টাইগারদের নয়। খেলোয়াড়দের  তো কোনো সমস্যা নেই, বাংলাদেশ হারলে এখন যত কষ্ট সব সমর্থকদের! কষ্ট তো তাদেরই প্রাপ্যই! প্রিয় দলকে সমর্থন করাই যেন তাদের বড় অপরাধ! 

টি-২০তে আফগানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাফল্যের হার মাত্র ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ চার ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচেই হারতে হয়েছে। আর একমাত্র জয়টাও ৫ বছর আগে।

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জয়ের পর সাকিব বলেছিলেন, ‘এই জয়টা আমাদের জন্য খুবই দরকার ছিল। দলটি এক কঠিন সময় পার করছিল। এই জয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। সামনে আমাদের আরেক কঠিন প্রতিপক্ষ!’

মোমেন্টামের জন্য যে দলের জিম্বাবুয়ের মতো হতাশার সাগরে ডুবে যাওয়া দলকে বেছে নিতে হয়,  সে দলের মানসিক অবস্থা যে কি অবস্থায় তা ব্যাখ্যা করার খুব এক আবশ্যকতা আছে কি? তারপরও এই দলকেই ভালোবাসেন সমর্থকরা। পাগলের                  মতো ভালোবাসেন- কারণ দলটির নাম যে বাংলাদেশ!

সাকিবরা কি পারেন না বাইশগজে ‘দায়িত্বশীলতা’র পরিচয় দিয়ে সমর্থকদের ভালোবাসার মূল্য দিতে?

 

 

সর্বশেষ খবর