সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

জার্সি নম্বর বদলে ভাগ্যের ছোঁয়া!

মেজবাহ্-উল-হক

জার্সি নম্বর বদলে ভাগ্যের ছোঁয়া!

ছবি : রোহেত রাজীব

সাদা পোশাকে বাংলাদেশ দলের স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুুল হক সৌরভ। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার পর তাকেই দেওয়া হয় নেতৃত্ব। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’ যেন ব্যাটিংই ভুলে গিয়েছিলেন! ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে তার ছিল না কোনো হাফ সেঞ্চুরি।

আর সেঞ্চুরি, সেটা তো শেষ করেছেন ১৫ মাস আগে, ১৫ ইনিংস আগে। এই পনের ইনিংসের মধ্যে তার হাফ  সেঞ্চুরিও মাত্র একটি। শেষ অর্ধশতক করেছিলেন ৮ ইনিংস আগে, ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে।

গতকাল ব্যাট হাতে বাইশগজে নামার আগের আগের ৭ ইনিংসে মুমিনুল হকের মোট রান কত ছিল জানেন? ৩, ৩৭, ৭, ০, ০, ৩০, ৪১ অর্থাৎ যার গড় করলে হয় ১৬.৮৬! আধুনিক ক্রিকেটে কোনো বোলারেরও গড় এতো কম আছে কি না সন্দেহ?

অথচ এই মুমিনুলকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘ব্রাডম্যান’! ডন ব্রাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড়ের পর বিশ্ব ক্রিকেটে সাদা  পোশাকে সবচেয়ে বেশি গড় ছিল বাংলাদেশের এই ব্যাটিং জিনিয়াসের! শুধু তা কেন, এখন সব মিলে গড় রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার উপরে মুমিনুলই। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই টেস্টের আগে তার গড় চল্লিশের কাছাকাছি (৩৯.৫৩)। সঙ্গে ছিল ৮টি সেঞ্চুরি ও ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি।

 সেই মুমিনুল যেন হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর তার পারফরম্যান্সে আরও ভাটা পড়ে যায়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়েছিল যে, এই টেস্টে রান না  পেলে মুমিনুলকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরের টেস্টে জায়গা দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে থাকতেন নির্বাচকরা।

একদিকে যেমন নিজের পারফরম্যান্স, পাশাপাশি তার অধীনে তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায়। অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মুমিনুল। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে খেললেন ১২০ বলে ৭৯ রানের হার না মানা ইনিংস। সঙ্গে ছিল ৯টি বাউন্ডারির মার। মুমিনুলের ক্যাপ্টেনস নকে দাপুটে অবস্থানে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন  শেষে জিম্বাবুয়ের ২৬৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছে ৩ উইকেটে ২৪০ রান। সাদা পোশাকে টাইগারদের রঙিন এক দিন। যদিও প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসের চেয়ে এখনো ২৫ রানে পিছিয়ে কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ টাইগারদের হাতে।

দারুণ ব্যাটিং করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। আউট হয়েছেন ৭১ রান করে। টেস্টে এটি তার প্রথম হাফ  সেঞ্চুরি।

সকালে বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল দুর্দান্ত। আগের দিন ৬ উইকেটে ২২৮ করা জিম্বাবুয়েকে গতকাল টাইগাররা আটকে দেয় ২৬৫ রানেই। আগের দিনের মতো গতকালও অসাধারণ বল করেছেন বোলাররা। বিশেষ করে পেসার আবু জায়েদ রাহী প্রথম ইনিংসসহ সব মিলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। 

তবে ব্যাটিং স্বর্গে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ১৮ রানে। এরপর শান্তর সঙ্গে অভিজ্ঞ তামিমের ৭৮ রানের জুটি। নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি ড্যাসিং ওপেনার। তামিম আউট হয়েছেন ৪১ রানে। তবে কাল একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলে ১৩ হাজার রান করার অনন্য গৌরব অর্জন করেছেন।

তামিম ড্রেসিংরুমে ফেরার পরই শুরু হয় মুমিনুলের ক্যারিশমা। শান্তর সঙ্গে ৭৬ রানের জুটি, তারপর মুশফিকের সঙ্গে ৬৮ রানের অপরাজিত জুটি। মুশফিক অপরাজিত রয়েছেন ৩২ রানে। আগের তিন টেস্টে ব্যর্থতার পর এই টেস্টে যেন সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুমিনুল।

মজার বিষয় হচ্ছে, একের পর এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর এই টেস্টে মুমিনুল তার জার্সি নম্বর বদল করেন। তার পুরনো জার্সি নম্বর ছিল ৬৮, আর এই টেস্টে তিনি সৌভাগ্যের প্রতীক ‘লাকি-সেভেন’ জার্সি পরে খেলতে নামেন। জিরো সেভেন নম্বরের জার্সি বদলেই যেন মুমিনুলের ভাগ্য বদলে গেল। এখন দেখার বিষয়, মুমিনুলের হাত ধরে বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে যায় কিনা!

 

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২৬৫/১০ (ওভার ১০৬.৩)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৪০/৩ (ওভার ৭১)

(তামিম ৪১, সাইফ ৮, শান্ত ৭১, মুমিনুল ৭৯*,

মুশফিক ৩২*; টিরিপানো ১৫-৩-৪০-১,

নিয়াউচি ১৩-২-৪১-১, রাজা ২২-১-৭৫-০,

টিশুমা ১২-০-৪৬-১, এনডিলোভু ৯-১-৩৩-০)।

সর্বশেষ খবর