রবিবার, ১৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রফিক জাদুতে প্রথম ওয়ানডে জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রফিক জাদুতে প্রথম ওয়ানডে জয়

ম্যাচের আগের রাতে টিম মিটিংয়ে প্রস্তাবটি দেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। সাবেক অধিনায়ক লিপু তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যানেজার। তার প্রস্তাব চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের। কিন্তু কোচ গর্ডন গ্রিনিজ ও অধিনায়ক আকরাম খানের দৃঢ়তায় প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত সবাই মেনে নেন। এরপর বাকি সব ইতিহাস। কি ছিল সেদিনের প্রস্তাবটি? তিন জাতির টুর্নামেন্ট খেলতে বাংলাদেশ তখন ভারতে। পরিসংখ্যান ও শক্তিমত্তায় স্টিভ টিকোলো, মরিস ওদুম্বের কেনিয়া অনেক এগিয়ে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী আফ্রিকান প্রতিনিধিদের বিপক্ষে জিততে ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ রফিককে খেলানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন লিপু। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেন করে বাজিমাত করেন রফিক। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম জয় উপহার দেন বাঁ হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। তার ৭৭ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ৫ উইকেটে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম জয়টি এসেছিল আজ থেকে ২২ বছর আগে এই দিনে। হায়দরাবাদে কেনিয়াকে টাইগাররা হারিয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৭ মে। রফিক ছিলেন ইতিহাস স্রষ্টা। ইতিহাস গড়া ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন আকরাম খান।                

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার আকরাম। ১৯৯৭ সালে তার নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফি জিতেছিল টাইগাররা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার ইনিংসটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম জয়টিও তার নেতৃত্বে। এজন্য আকরাম নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। অসাধারণ দুটি ম্যাচের অধিনায়ক থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছেন আকরাম, ‘আল্লাহ’র কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। আইসিসি ট্রফি জয় এবং বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় দুটির অধিনায়ক ছিলাম আমি। এটা আমার সারা ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি।’ কাকতালীয় বিষয়, আইসিসি ট্রফির ফাইনালেও বাংলাদেশ হারিয়েছিল কেনিয়াকে। কেনিয়ার বিপক্ষে জয়টি বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করেছেন বলেন আকরাম, ‘শক্তিমত্তা ও ফিটনেসে অনেক এগিয়েছিল কেনিয়া। তাদের ৪/৫ জন ক্রিকেটার ছিলেন বিশ্বমানের। এমন একটি দলের বিপক্ষে জয় আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।’  

হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশ স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হারলেও লড়াই করেছিল। ওই ম্যাচের আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছিল কেনিয়ার বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করে কেনিয়ার সংগ্রহ ছিল ৪৯ ওভারে ২৩৬ রান। সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন রবীন্দু শাহ। টাইগারদের সেরা বোলার ছিলেন রফিক। বাঁ হাতি স্পিনার ১০ ওভারের স্পেলে ৫৬ রানের খরচে নেন ৩ উইকেট। খালেদ মাহমুদ সুজন ৩৮ রানে ২টি এবং এনামুল হক মনি ও মোর্শেদ আলি খান সুমন একটি করে উইকেট নেন। ২৩৭ রানের টার্গেট ছুঁয়েছিল বাংলাদেশ ১২ বল হাতে রেখে। নতুন বলে আতহার আলি পরিচিত মুখ। রফিক ছিলেন একেবারে আনকোড়া। অভিজ্ঞ আতহার ও অনভিজ্ঞ রফিক উদ্বোধনী জুটিতে ২৬ ওভারে ১৩৭ রান যোগ করে জয়ের ভিত গড়ে দেন। আতহার ৯১ বলে ৪৭ রান করেন। রফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৭৭ রানের ম্যাচসেরা ইনিংসটি খেলেন ৮৭ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। শেষ দিকে ৫১ বলে ৩৯ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে প্রথম ওয়ানডে জয় দেন আকরাম। ম্যাচটি আকরাম খেলেছিলেন পেইন কিলার ৪টি ইনজেকশন নিয়ে। রফিকের ইনিংসটি নিয়ে আকরাম বলেন, ‘অসাধারণ ব্যাটিং করেছিলেন রফিক। তাকে মূলত ওপেনার করা হয়েছিল কম বলে দ্রুত রান তোলার জন্য। যাকে এখন বলে পিঞ্চ হিটার। রফিক সেই কাজটি শতভাগ করেছিলেন। আমার মতে রফিক খুবই দুর্ভাগ্যবান একজন ক্রিকেটার। এখন যদি তিনি খেলতেন, তাহলে আমি নিশ্চিত সে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হতেন।’ম্যাচটি জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। আকরাম, রফিক, সুজন, নান্নু, শান্ত, মনিরা সারা রাত উৎসব করেছিলেন হায়দরাবাদে। 

 

আজ সেই দিন

কেনিয়া : ২৩৬/১০, ৪৯ ওভার ( দীপক চুদাসামা ৩৬, স্টিভ টিকোলো ২০, হিতেশ মোদী ৪০,

রভন্দিু শাহ ৫২। মোর্শেদ আলী খান ১/২৬,

খালেদ মাহমুদ ২/৩৮, এনামুল মনি ১/৪৫, মোহাম্মদ রফিক ৩/৫৬)।

বাংলাদেশ : ২৩৭/৫, ৪৮ ওভার ( আতহার আলি খান ৪৭, মোহাম্মদ রফিক ৭৭, মিনহাজুল আবেদীন ১৪, আমিনুল বুলবুল ২০), আকরাম খান ৩৯। মরিস ওদুম্বে ১/৪২, মোহাম্মদ শেখ ২/৪৬)।

ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ রফিক 

সর্বশেষ খবর