শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর

২০০৫ সালে যুব দলের হয়ে তখন অস্ট্রেলিয়া সফর করছেন। সে সময় বিসিবি তাকে সংবাদ পাঠায় ইংল্যান্ডে জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে। মুশফিকুর রহিমের বয়স তখন ১৭। হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট, জাভেদ ওমর বেলিম, নাফিস ইকবাল, মোহাম্মদ আশরাফুল, আফতাব আহমেদদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের ভিড়ে তরুণ মুশফিকের জায়গা করে নেওয়া একটু বেশিই কঠিন ছিল। কিন্তু স্বপ্নবাজ ক্রিকেটার মুশফিক সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জায়গা করে নেন মূল একাদশে। লর্ডসে অভিষেক ম্যাচে অভিষেক। এন্ড্রু ফ্লিনটপ, হার্মিসন, ম্যাথু হোগার্ডদের মতো পেসারদের বিপক্ষে আহামরি পারফরম্যান্স করতে পারেননি। কিন্তু ১৯ ও ৩ রানের ইনিংস দুটি খেলে ভবিষ্যতের বীজ বপন করেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে যাত্রা। ২০২০ সালেও খেলছেন দাপুটে ক্রিকেট। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আলোকিত করেছেন দেশের ক্রিকেটকে। উৎসব, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার বহু উপলক্ষ তৈরি করেছেন এ সময়ে।

টেস্টে একজন জেনুইন ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক মুশফিকের। ফ্লিনটপ, হার্মিসন, হোগার্ড ও জোন্সের গতি, সুইং ও বাউন্সের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসে করেছিলেন ১৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রান। ২০০৫ সালের অভিষেকের পর গত দেড় দশকে বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে নিজেকে পরিণত করেছেন। শানিত হয়েছেন। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছেন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলেছেন লড়াকু সব ইনিংস। উপহার দিয়েছেন একের পর এক জয়। মুশফিকের বয়স এখন ৩৩ বছর। ৭০ টেস্টে রান করেছেন ৪৪১৩। সেঞ্চুরি ৭টি। যার তিনটিই ডাবল সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মুশফিক একমাত্র ক্রিকেটার তিন তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়েছেন। শুধু তাই নয়, টাইগারদের প্রথম প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিই আবার তার। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালে ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং ২০২০ সালে করোনাভাইরাসে খেলাধুলা বন্ধ হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে খেলেন ২০৩ রানের আরও একটি অপরাজিত ইনিংস। ১৫ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলেছেন গলের ডাবল সেঞ্চুরিকে, ‘দেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কথা ছিল আশরাফুল ভাইয়ের। কিন্তু আমি করেছি। ইতিহাস গড়তে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি এই ইনিংসটিকেই আমার সেরা বলব।’

টেস্টের মতো সমৃদ্ধ ওয়ানডে ও টি-২০ ক্যারিয়ারও। ২০০৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। কিন্তু ব্যাট হাতে নামা হয়নি। ২০২০ সালে সর্বশেষ ওয়ানডেটিও খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রান করেছেন ৫৫। এই ১৪ বছরে ২১৮ ওয়ানডেতে রান করেছেন ৬১৭৪। সর্বোচ্চ ১৪৪ এবং সেঞ্চুরি ৭টি ও হাফসেঞ্চুরি ৩৮টি। এই ১৪ বছরে তিনি বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে বিদায় করার ম্যাচে খেলেছিলেন ৫৬ রানের হার না মানা ইনিংস। ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি করেছেন সাতটি। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ওই ইনিংসটিকে ভুলতে পারবেন না কখনোই,  ‘উইনিং শটটি নেওয়ার পরও বুঝতে পারছিলাম না কি হয়েছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মেসেজে অভিনন্দন বার্তাগুলো পাওয়ার পর বুঝেছিলাম আমরা কি করেছি। উইনিং শটটি নিতে দেওয়ার জন্য আশরাফুল ভাইকে ধন্যবাদ। কারণ তিনিই আমাকে এই সুযোগটি করে দিয়েছিলেন।’ আনন্দ করার অনেক মুহূর্ত থাকলেও কষ্টের ম্যাচও রয়েছে মুশফিকের ক্যারিয়ারে। ২০১৬ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে টি-২০ ক্রিকেটে ভারতকে হারাতে না পারার সুযোগটি তাকে আজীবন পোড়াবে বলেন মুশফিক, ‘টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর সুযোগটি আমায় সারা জীবন তাড়াবে। তবে দিল্লিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারাতে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলাম। ইনিংসটি খেলার পর অনেকটা হালকাবোধ করেছিলাম।’

দেড় দশকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট মুশফিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন পরিবার, পরিজন, কোচ, ক্রিকেট বোর্ড, সতীর্থদের। দেড় দশকের পূর্তি উপলক্ষে জানিয়েছেন, এমআর ফাউন্ডেশন তৈরির কথা। ফাউন্ডেশনটির লোগো বানিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন ভক্তদের। বাছাইকৃত পাঁচ ভক্তের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে ডিনার করা ছাড়াও তাদেরকে অটোগ্রাফ করা একটি টি-শার্ট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ক্রিকেটার মুশফিক আবার মানবিকতায়ও সেরা। গলে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটটি নিলামে বিক্রি করেছেন ২০ হাজার ডলারে। সেই অর্থ নিজ ফাউন্ডেশন থেকে খরচ করবেন করোনাভাইরাসে অসহায়দের জন্য। 

সর্বশেষ খবর