ফুটবলের আকাশে কালো মেঘ। এতটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি কখনো হয়নি ফেডারেশন। এখন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এজন্য দায়ী করা যায় গুটিকয় কর্মকর্তাকে। তাদেরই স্বেচ্ছাচারিতায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বিতর্কে ভাসছে। ফিফা, এএফসি ও কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফোর স্পোর্টের কাছে নালিশ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল টঙ্গী আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পেশাদার লিগ আয়োজন ঘিরে যে মন্তব্য করেছেন তা বাফুফের জন্য বড় লজ্জার। দেশের কোনো ফেডারেশনকে নিয়ে কখনো কোনো ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এমন কঠোর সমালোচনা করেননি। রাসেল এমন কথাও বলেছেন, ‘আমরা বাফুফের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করব। এর ওপর নির্ভর করছে তারা জাতীয় পরিষদ থেকে অনুদান পাবে কি না।’ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মানেই দেশের ক্রীড়া অভিভাবক। তিনি যা বলেছেন তা বাফুফের জন্য বড় হুঁশিয়ারি।
বসুন্ধরা কিংসের ভেন্যু অযথা বাতিলের পরই ফুটবল ঘিরে তোলপাড় চলছে। বাফুফের লিগ কমিটিই লিখিত অনুমতি দেয় হোম ভেন্যু হিসেবে কিংস বসুন্ধরা মাল্টি ক্রীড়া কমপ্লেক্স ব্যবহার করতে পারবে। বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স টঙ্গী ও মুন্সীগঞ্জকে ভেন্যু করে লিগের ফিকশ্চারও তৈরি হয়। কিংস সেভাবেই ভেন্যু প্রস্তুত রাখে। কিন্তু লিগ শুরুর এক দিন আগে হঠাৎই ক্লাবগুলোকে নিয়ে বৈঠকে কিংসের হোম ভেন্যু বাতিলের ঘোষণা দেন সালাম মুর্শেদী। কেন বাতিল হলো তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা অবশ্য দিতে পারেননি তিনি।
ফেডারেশনের কাছে সুবিচার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে ফিফা ও এএফসি ছাড়াও কোর্ট অব আরবিট্রেশনের কাছে প্রমাণসহ এসব অনিয়ম তুলে ধরে কিংস। কোর্ট অব আরবিট্রেশন আন্তর্জাতিক ক্রীড়ার সর্বোচ্চ আদালত। এখানে নালিশ করায় এমনিতেই বাফুফের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কী যে হবে সে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এরপর আবার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে বাফুফে কর্মকর্তাদের মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম। প্রতিমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, টঙ্গী স্টেডিয়াম পেশাদার লিগের জন্য উপযোগী নয়। তার পরও বাফুফে সেখানে লিগ করছে। প্রতিমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা না মেনে গতবারও লিগ করেছে। এবার যা করেছে রীতিমতো জবরদস্তি। একে দখলই বলা যায়। লিখিতভাবে বাফুফেকে বলা হয়েছিল আপনারা আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে আলাপ করবেন। মাঠ ব্যবহার করে আর্চাররা। তাদের সমস্যা না হলে আপনারা খেলতে পারবেন না।’ অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশ উপেক্ষা করেছে বাফুফে। আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। ভবিষ্যতে ফুটবলকে ক্রীড়া পরিষদের অনুদান দেওয়া যাবে না কি না তা বাফুফের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে।
প্রতিমন্ত্রী এও বলেছেন, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে। ক্রীড়া উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রীড়া কমপ্লেক্সও গড়ছে। এগুলো কি বাফুফের চোখে পড়ে না? তাহলে তাদের কাজ কী?’ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ভেন্যু নিয়ে বাফুফে যে আচরণ করেছে এখন তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখতে হবে।