রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রজার তুমিই রাজা!

লন্ডনে শেষ ম্যাচ খেললেন ফেদেরার

মেজবাহ্-উল-হক

রজার তুমিই রাজা!

এ ধরায় টেনিস যত দিন থাকবে, রেকর্ডবুকে-হৃদয়ে সোনার হরফে লেখা থাকবে এই নাম -রজার ফেদেরার। অনেকেই আসবে, তারকা হবে, আর চলেও যাবে -কিন্তু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে কেবল তুমি।  টেনিসে তুমি মহানায়ক। রজার তুমিই রাজা।

দর্শকের চোখ ছল ছল করছে। ম্যাচ রেফারির চোখে পানি। সতীর্থরা কাঁদছেন। চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালও। সবাই কাঁদছে। এমন আবেগঘন বিদায় কতজনেরই বা কপালে জোটে! ফেদেরারের এই বিদায় যেন কেউ মানতে পারছিলেন না।

রজার ফেদেরার কেবল নিজের খেলাটাই খেলেছেন এমন নয়। তার র‌্যাকেটের জাদুকে পুরো বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। টেনিসের দর্শকের পুরো অংশই যেন ফেদেরার ভক্ত। ক্রীড়াবিশ্বে একচেটিয়া সমর্থন আর কোনো ক্রীড়াবিদ পেয়েছেন কিনা!

ফেদেরারের ক্যারিয়ার অতৃপ্তি বলে কিছু নেই। ২০টি গ্র্যান্ড স্লামের সঙ্গে ক্রীড়া বিশ্বের অকুন্ঠ ভালোবাসা। সে কারণেই বোধহয় বিদায়বেলায় শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদলেন।

টেনিস কোর্টে সুইজারল্যান্ডের কিংবদন্তির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাদাল। ৯টি গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালসহ ৪০ বার দুই তারকা মুখোমুখি হয়েছেন। লেভার কাপের ম্যাচে লন্ডনে বিদায়বেলার সেই নাদালের সঙ্গে জুটি হয়ে খেলতে নামলেন। ম্যাচ শেষে স্প্যানিশ তারকা চোখ মুছতে মুছতে নাদাল বললেন, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।’

বিদায়ী ভাষণে কাঁদতে কাঁদতে ফেদেরার বললেন, ‘এই দুঃখের সময়টা দ্রুতই কাটিয়ে উঠব। এই দিনটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমি ভালো আছি। শেষবারের মতো কোর্টে জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করলাম।’

লন্ডনে ভক্তদের আশ্বস্ত করতে ৪১ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি বলেছেন, ‘এখানেই সবকিছুর শেষ নয়; জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে চলবে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমন সব জায়গায় গিয়ে খেলতে চাই, যেখানে আগে কখনো খেলিনি। সামনের বছরগুলোয় শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই সবাইকে, যাঁরা এত দিন ধরে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’

বিদায়ী ম্যাচে জিততে পারেননি ফেদেরার। তিনি এখন র‌্যাঙ্কিংয়েও এক নম্বর খেলোয়াড় নন। গ্ল্যান্ড স্লাম জয়েও সবার ওপরে তিনি নন (ফেদেরার ২০টি, নোভাক জকোভিচ ২১টি, রাফায়েল নাদাল ২২টি)। তাতে কি? টেনিসে তার উচ্চতা অনেক উপরে। রেকর্ডবুককে আলাদা করে রাখলেও তার বিদায়কে ঘিরে যে আবেগঘন পরিস্থিতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে হাইপ তাতে বলার অপেক্ষা রাখে না -তিনিই টেনিসের সম্রাট। 

টেনিস মানেই ফেদেরার। গত ২৪ বছরে তিনি নিজে যেমন টেনিস থেকে যশ, খ্যাতি, মর্যাদা পেয়েছেন তার চেয়ে যেন ঢের বেশি টেনিসকে দিয়েছেন আনন্দের মুহূর্ত। ভালোবাসায় মুড়িয়ে দিয়েছেন টেনিসকে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তারকা আসছেন। ভবিষ্যতেও আসবেন। কিন্তু ফেদেরারের মতো এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা আর কতজনই বা পাবেন!

বিদায় বেলায় সবার চোখের জল এবং বিশ্ব জুড়ে ভক্তদের আকুতি বুঝিয়ে দিচ্ছিল ফেরেরার কত বড় কিংবদন্তি। কত বড় তারকা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভক্ত লিখেছেন-

এ ধরায় টেনিস যত দিন থাকবে, রেকর্ডবুকে-হৃদয়ে সোনার হরফে লেখা থাকবে এই নাম -রজার ফেদেরার। অনেকেই আসবে, তারকা হবে, আর চলেও যাবে -কিন্তু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে কেবল তুমি।  টেনিসে তুমি মহানায়ক। রজার তুমিই রাজা।  

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর