শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান ব্যর্থ

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান ব্যর্থ

মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বিপর্যয়ের মুখে তামিম-সাকিব জুটি ১৮.২ ওভারে ৭৯ রান যোগ করেন ছবি : রোহেত রাজীব

বড় টার্গেট তাড়া করতে যে সাহস, আত্মবিশ্বাস কিংবা দায়িত্ববোধ থাকা দরকার তার ছিঁটেফোটাও ছিল না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঝে। তাই ৩২৬ রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ১৯৪ রানেই গুটিয়ে গেল ইনিংস। ১৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে হার টাইগারদের।

গতকাল মিরপুরে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ছিল যতটা নান্দনিক, ছন্দময় এবং আগ্রাসী, বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ঠিক তার উল্টো! সুর, তাল, লয় কিছুই ছিল না- যেন এলোমেলো ফিউশন!

টপ অর্ডারে জেসন রয় তার স্বভাবজাত মারকুটে ব্যাটিং চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেললেন ১৩২ রানের ইনিংস। মিডল অর্ডারে বাইশগজে ঝড় তোলেন অধিনায়ক বাটলার। খেললেন ৬৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। আর শেষ লোয়ার অর্ডারে মঈন আলির ৩৫ বলে ৪২ এবং স্যাম কারেনের ১৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস ছিল দেখার মতো। পরিকল্পনার পারফেক্ট বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি। কী পেসার কী স্পিনার- কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। আর ব্যাটিংয়ে তো যাচ্ছেতাই। একমাত্র সাকিবের ৫৮ রান। চতুর্থ উইকেটে সাকিব ও তামিমের ৭৯ রানের জুটি ছাড়া আর হাফ সেঞ্চুরি পার্টনারশিপও গড়ে ওঠেনি।

গতকাল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটাই হয়েছিল দুর্যোগের মধ্য দিয়ে। তিন ওভারেই নেই তিন উইকেট। বাইশগজে নির্ভরতার প্রতীক লিটন কুমার দাস এবং আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা নাজমুল হোসেন শান্ত ‘গোল্ডেন ডাক’। ম্যাচের প্রথম ওভারে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টপ অর্ডারের দুই তারকা ব্যাটসম্যানের উইকেট শিকার করে হ্যাটট্রিকের দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন ইংলিশ তারকা পেসার স্যাম কারেন।

উঁকি দিচ্ছিল ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে লঙ্কান তারকা চামিন্দা ভাসের সেই রেকর্ডটি। প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক করে টাইগারদের লজ্জায় ডুবিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাল স্যাম কারেনকে সেই সুযোগ দেননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। কিন্তু মিস্টার ডিপেন্ডেবল তো নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। নিজের পরের ওভারে এসে মুশফিককে ড্রেসিংরুমের রাস্তা দেখিয়ে দেন। দলের ৯ রানের মাথায় টপ অর্ডারের তিন উইকেট নেই।

অথচ কাল বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমেছিল রেকর্ড গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল খেলতে গিয়ে পয়েন্টে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ  তুলে দেন লিটন। আউট সুইং বল বুঝতে না পেরে ডিফেন্স করতে গিয়েই ভুলই করলেন শান্ত। তার ব্যাটে আলতো স্পর্শ করে বল জমা হলো উইকেটরক্ষক বাটলারের গ্লাভসে। ১৭ ইনিংসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো প্রথম বলে আউট হওয়ার লজ্জা পেলেন তিনি। সাকিব ছাড়া স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ৩৫, মাহমুদুল্লাহ ৩২ এবং আফিফ করেন ২৩ রান। ‘ফিনিশার’ হিসেবে সুযোগ পাওয়া আফিফ যেন বারবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। ব্যাটসম্যানদের আত্মসমর্পণের দিনে প্রশংসা পেতেই পারে ৯ নম্বরে ব্যাট হাতে নামা তাসকিন আহমেদের ২১ বলে ২১ রানের ইনিংসটি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট না হলেও হয়তো আরও কিছুটা বিনোদন দিতে পারতেন এই গতি তারকা।

দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড যেন বুঝিয়ে দিল কেন তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! পরিস্থিতি কিংবা কন্ডিশন বুঝে কীভাবে দেখে-শুনে আধিপত্য বিস্তার করতে হয় তা ইংলিশদের কাছ একটা দারুণ ছবকই পেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ম্যাচে ডেভিড মালান একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করে জয় নিশ্চিত করলেন মাঠ ছাড়লেন। আর গতকাল একই ভূমিকা পালন করলেন জেসন রয়।

রানের গতি ঠিক রেখে বাইশগজে আধিপত্য বিস্তার করলেন। হাতে উইকেট থাকায় শেষ দিকে ঝড় তোলেন মঈন আলি ও স্যাম কারেন। মাঝে ক্যাপ্টেন জস বাটলারের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো।  কী দারুণ পরিকল্পনার ছাঁপ।

ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই অনন্য ইংল্যান্ড। সামনেই ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ। তাই উপমহাদেশ জয়ের যে মিশন নিয়ে ইংলিশরা এসেছিলেন তাতে দারুণ সফল। কিছু আগে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ভারতও হেরে গেল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, তাদের বিরুদ্ধেই সদর্পে সিরিজ জয় করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!

 

সর্বশেষ খবর