রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে প্রায় নয় বছর আগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ২২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এ মামলায় বিচারিক আদালতের ছয় বছর আগে দেওয়া রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা, নৃশংসতা এবং ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুর আচরণের ফলে বহির্বিশ্বে যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আপিলকারী আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি। মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। ডেথ রেফারেন্স নামঞ্জুর করে আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলায় রায়টি লিখেছেন, এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি সহিদুল করিম।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালানো হয়। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে এবং কুপিয়ে ও গুলি করে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইতালির নাগরিক ৯ জন, জাপানের সাতজন, ভারতের একজন ও বাংলাদেশি তিনজন ছিলেন। আর সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। ‘নব্য জেএমবির’ সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রাসঙ্গিক বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ফরেনসিক, ব্যালিস্টিক, ডিএনএ ও ইমিগ্রেশন রিপোর্ট এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতৃত্বে অতি উগ্র অংশ নব্য জেএমবি পরিচয়ে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালায়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ ধারা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার প্রচেষ্টা নিয়ে অর্থাৎ সরাসরি অংশ নিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে ৬(২)(অ) ধারায় তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। আর ৬(১)(ক)(আ) ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর জখম, আটক বা অপহরণ করার জন্য অপর কোনো ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে ৬(২)(আ) ধারায় ওই অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড হয় সে ক্ষেত্রে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) বছর ও অন্যূন ৪ (চার) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।