মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড় ওয়ার্মআপে নেমে পড়লেন। টার্ফে কয়েক চক্কর দিয়ে তারা ছুটে গেলেন নতুন কোচ নেদারল্যান্ডসের সিগফ্রিড আইকম্যানের কাছে। ডাচ এ কোচের কাছ থেকে দীক্ষা নিলেন। ল্যাপটপের স্ক্রিন মেলে ধরে শিষ্যদের সামনে ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনূর্ধ্ব-২১ দলের দায়িত্ব নেবেন আইকম্যান। তার আগে চুক্তি সারতে এসেছেন ঢাকায়। অফিশিয়াল দায়িত্ব না নিলেও ভবিষ্যৎ কাজের সুবিধার্থে সহকারী কোচ ও শিষ্যদের সামনে নিজের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। দিন কয়েকের মধ্যেই ফিরে যাবেন। আসবেন সেপ্টেম্বরে।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল গত জুনিয়র এশিয়া কাপে পঞ্চম স্থান অর্জন করে। নিশ্চিত করে জুনিয়র বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব। ঐতিহাসিক এক ঘটনার সাক্ষী হয় বাংলাদেশের হকি। এরপর থেকেই আলোচনা চলে, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার প্রস্তুতিটা কেমন হবে! ভালো মানের কোচ আনার দাবিও ওঠে। শেষ পর্যন্ত এশিয়ান হকিতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোচকে নিয়োগ দিল হকি ফেডারেশন। সিগফ্রিড আইকম্যান গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে এশিয়ান হকিতে কাজ করছেন। জাপান, ওমান এবং পাকিস্তানের মতো দলে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার বাংলাদেশকেও নতুন একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। গতকাল নতুন কোচকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হকি ফেডারেশন। সেখানে সিগফ্রিড আইকম্যান বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি জাপানের কোচ হই। এরপর থেকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকে মোকাবিলা করেছি। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে প্রথম বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিলাম। বাংলাদেশের এই দলে (অ-২১) বিকেএসপির খেলোয়াড় রয়েছে অনেক। তারা বেশ মেধাবী।’ দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের হকি অনুসরণ করছেন আইকম্যান। দলটির শক্তি ও দুর্বলতাও ভালোভাবেই ধরতে পেরেছেন তিনি। আইকম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের শক্তি হলো স্কিল এবং ফিজিক। কিন্তু দুর্বলতাও অনেক। স্টেমিনা এবং পাওয়ার কম। ডিফেন্স ফাঁকা করার প্রবণতা আছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে নিজেদের টিকিয়ে রাখার দিক দিয়ে বেশ দুর্বল।’ এসব বিষয় নিয়েই মূলত কাজ করবেন নতুন কোচ।
বিশ্বকাপের আগে সময় বেশি নেই। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো হকির পরাশক্তি দলগুলো। এদের বিপক্ষে কতটা ভালো করা সম্ভব! কোচ বলেন, ‘বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমাদের লক্ষ্য যতটা সম্ভব ভালো করার জন্য চেষ্টা করা। প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী। অস্ট্রেলিয়া এ টুর্নামেন্টের সাবেক চ্যাম্পিয়ন। ফ্রান্স গতবারের রানার্সআপ। এ দলগুলোর বিপক্ষে আমরা জিতে যাব, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। তবে আমরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মতো অবস্থায় যেতে চাই। চমক দেখাতে চাই।’ দলের মধ্যে লড়াই করার মানসিকতা আনতে চান ডাচ কোচ। সহকারী কোচদের সঙ্গে এরই মধ্যে কথা বলেছেন আইকম্যান। ফিটনেস লেভেল ভালো মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। দুই দেশীয় কোচ আশিকুজ্জামান ও মশিউর রহমান বিপ্লব তার নির্দেশনা অনুযায়ী কোচিং করাবেন। বর্তমানে ৪০ জন হকি খেলোয়াড় ক্যাম্পে আছেন। এদের মধ্য থেকে প্রথমে ২৮ জন বেছে নেবেন কোচ। এরপর ধীরে ধীরে চূড়ান্ত দল ঠিক করবেন।
হকি ফেডারেশন নতুন কোচের কাছ থেকে চমক দেখানোর মতো কিছু আশা করছে না। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব) বলেন, ‘বিশ্বকাপ ও আমাদের লেভেল আমরা বুঝি। তাই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার বা ওই পর্যায় খেলব এমন ঘোষণা দেব না। ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াকে ভয় না পাওয়া এবং তাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে লড়াই করে আমাদের র্যাঙ্কিং অবস্থান উন্নতি করাই মূল লক্ষ্য।’ সামনেই পাকিস্তান ও ইউরোপ সফরে যাবে দল। সেখানে মোট ১০টি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সফর শেষ করতে চায় হকি ফেডারেশন। কারণ বিশ্বকাপের আগে কয়েক সপ্তাহ সময় চান কোচ নিজেদের ভুল শোধরানোর জন্য। আগামী ২৮ নভেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ। সেখানে ইতিহাস গড়ে যাবে বাংলাদেশ।