মুমিনুল হক সাঈদকে নিয়ে হকিতে বিতর্কের শেষ ছিল না। এ খেলা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকা সত্ত্বেও দুবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তা-ও আবার নির্বাচিত হয়ে। দুটি নির্বাচনই ছিল বিতর্কে বন্দি। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। যাক, সাঈদ তো আর হকি ফেডারেশনে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই আত্মগোপনে আছেন। শোনা যায় বিদেশে পালিয়ে গেছেন। বিতর্কিত নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে হকিতে অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নয় মাসের বেশি সময় ধরে এ কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। এতে জনপ্রিয় এ খেলায় শৃঙ্খলা ফিরেছে কি? সাঈদ বা অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ ছিল না। অ্যাডহক কমিটি এসে অনিয়মের তদন্ত করেছে কি? কোনো কিছুই করা হচ্ছে না। বরং অ্যাডহক কমিটির মধ্যে নাকি সাঈদের ছায়া দেখা যাচ্ছে। বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে ফুঁসে উঠছে দেশের হকি।
হকি ফেডারেশনের অস্থিরতা এত চরমে উঠেছে যে স্বয়ং জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। ফেডারেশনের যুগ্মসম্পাদক আবু জাফর তপনের পদত্যাগও চাওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়া কাপ বাছাই পর্ব চলাকালে। সেখানে খেলোয়াড়দের এতটা নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়েছিল যা মুখে তোলার মতো নয়। এতে খেলোয়াড়রা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তপন সহকারী ম্যানেজার হিসেবে ট্যুরে যান। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে খেলোয়াড় নাইমউদ্দিন বলেন, ‘তপন ভাই অশ্লীল ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করেছেন। আমরা কি গালি শোনার জন্য জাতীয় দলে খেলি? ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ বাছাই পর্বে ওমানের কাছে হেরে যাওয়ায় এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি। এমন ব্যর্থতায় আমরা লজ্জিত, পাকিস্তান আসর থেকে নাম প্রত্যাহার করায় এশিয়ান হকি ফেডারেশন বাংলাদেশকে খেলার সুযোগ দেয়।’
নাইম জানান, ‘এশিয়া কাপ খেলাটা গর্বের। অথচ দল যখন ফেডারেশন ঘোষণা করল সেখানে আমি, পুষ্করক্ষিসা মিমোসহ চার খেলোয়াড় নেই। এতে আমরা বিস্মিত না হয়ে পারিনি। যাক, দল চূড়ান্ত করে ফেডারেশন। তার পরও জানার অধিকার আছে জাতীয় দলে সুযোগ পেলাম না কেন? পারফরম্যান্সে ঘাটতি না অন্য কিছু? তা জানতে যদি গালি শুনতে হয় এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে? তপন ভাই সিনিয়র খেলোয়াড়। তাঁর কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। গালিটাই কি শিক্ষা-কে জানে?’ তপন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই গালিগালাজ করিনি। যা বলা হচ্ছে পরিকল্পিত। আমি কী কারণে গালি দেব! একাধিক সিলেক্টর মিলে চূড়ান্ত দল গড়েছেন। সেখানে আমার দিকে তির ছোড়া হচ্ছে কেন-সেটাই প্রশ্ন। পারফরম্যান্স না থাকলে দলে কি নেওয়া যায়?’
ইন্দোনেশিয়ার ঘটনা সম্পর্কে তপন বলেন, ‘শুনলাম বলা হচ্ছে ওখানে নাকি নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়েছে। যা সত্য নয় তা বলা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? এতদিন পর কেন এ অভিযোগ? আপনি ওই সফরে যারা সঙ্গী ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন খাবার নিয়ে কেউ আপত্তি তুলেছিল কি না?’ যাক, তপন না বললেও জানা গেছে, নিম্নমানের খাবার নিয়ে খেলোয়াড়রা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। দেশে ফিরে ফেডারেশনকে নাকি তা জনানোও হয়েছিল। খেলোয়াড় ছাড়া কোচ মামুন-উর রশিদও নাকি খাবার নিয়ে ম্যানেজার বায়েজিদ ও সহকারী ম্যানেজার তপনের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এজন্য মামুনকে এশিয়া কাপের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। পুষ্কর ও নাইমকেও বাদ দিয়ে তাঁদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এমনটি শোনা যাচ্ছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া পুষ্করও বলেন, ‘আমরা আবু জাফর তপনের পদত্যাগ চাচ্ছি। তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা বাংলাদেশের সব হকি খেলোয়াড়ের উদ্দেশেই বলেছেন।’ প্রশ্ন হচ্ছে-চার হকি খেলোয়াড় যে কথা বলেছেন, তাতে ফেডারেশন তপনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না? জানা গেছে, তপন নন, নাইমউদ্দিন ও পুষ্করকে ফেডারেশনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতে পারে। কেন তারা একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ তুললেন? এতে কি পরিবেশ শান্ত হবে? জানা গেছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশের হকি আরও ফুঁসে উঠতে পারে। আর এর সঙ্গে যোগ হতে পারে শীর্ষ ক্লাবগুলোও। এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও প্রিমিয়ার বা কোনো লিগের দেখা নেই। লিগই হচ্ছে খেলোয়াড়দের আয়ের বড় পথ। মাঠে খেলা না গড়ানোয়ই তো মানবেতর দিন পার করছেন খেলোয়াড়রা। এশিয়া কাপ শেষ হলেই খেলোয়াড়রা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে স্মারকলিপি তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। শুধু তাই নয়, অ্যাডহক কমিটির অনিয়মের চিত্রও তুলে ধরবেন বলে ফেডারেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা জানান। এশিয়া কাপ ও নভেম্বরে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলবে ঠিকই, তার পরও ফুঁসে উঠছে দেশের হকি?