'সুয়িং সুলতান' ওয়াসিম আকরাম। পাঁচ পাঁচটি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ৯২-র বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছিলেন। ওই আসরে ১৮ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখার পাশাপাশি 'ম্যান অব দ্য ফাইনাল' হয়েছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০২ উইকেট শিকার করেছেন। আইসিসির ওয়েবসাইটে বিশ্বকাপ নিয়ে লিখেছেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি পেসার-
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় খেলোয়াড়দের। নিজেকে প্রদর্শন করতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। যেকোনো কন্ডিশনে ভালো খেলার সামর্থ্য থাকা চাই। তবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্বকাপটা কঠিন হবে। সে জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত থাকাটা জরুরি। তাই বলে আমি ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি না মোটেও। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপটা বোলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষ করে উপমহাদেশের বোলারদের জন্য।
বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুড়ে দাঁড়ানোর মানসিকতাও থাকতে হবে। পেসারদের প্রতি আমার উপদেশ থাকবে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনেক বেশি চাপ নিতে হবে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তাই যতটা সম্ভব নিজেকে ঝালিয়ে নিতে হবে।
ফিটনেস ঠিক রাখা মানেই, বুঝতে হবে অর্ধেক কাজ হয়ে গেছে। এরপর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো উইকেটে যত বেশি সম্ভব বোলিং করতে হবে। এটা সবারই জানা যে, অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে সাধারণত অনেক বেশি বাউন্স থাকে। পেসাররা বাড়তি সুবিধা পায়। পার্থের 'ওয়াকা' মাঠে সবচেয়ে বেশি বাউন্স থাকে। এটা পেসারদের স্বর্গ। ব্রিসবেনের 'গাব্বা' মাঠও পেসারদের দারুণ সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া অন্য ভেন্যুগুলোতে ভালো বাউন্স পেলেও পেসাররা বেদম মার খেতে পারে লাইন-লেন্থে একটু এদিক-সেদিক হলেই। এই মাঠগুলোতে ব্যাটসম্যানরা খুব সহজেই রান করতে পারে। অ্যাডিলেড ও সিডনিতে স্পিনাররা বেশি সুবিধা পায়। ব্যাটিংয়ের জন্যও দারুণ এই দুই ভেন্যু। এমসিজির (মেলবোর্ন) উইকেট পেসারদের জন্য ভালো হলেও সেখানকার বাউন্স ব্যাটসম্যানরা সহজেই খেলতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে 'কোকাবুরা' বলে পেসারদের ভালো করা খুবই কঠিন। এই বলটা তুলনামূলক নরম। তবে অনেক বেশি বাউন্স করে। তাই বোলাররা ভালো লেন্থের পাশাপাশি শট বল করে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে। তবে তা নির্ভর করবে বোলারের কৌশলের ওপর। যেসব ব্যাটসম্যান পেছনের পায়ে ভর করে খেলে, তারা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে বাড়তি সুবিধা পাবে। তাই পেসারদের এমন কিছু করতে হবে, যাতে তারা সামনের পায়ে ভর করে খেলতে আগ্রহী হয়।
আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে, বোলিংয়ের কারণেই ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। আমাদের বেশ কয়েকজন পার্টটাইম বোলার ছিল- ইজাজ আহমেদ, আমির সোহেল। অসাধারণ বোলিং করেছিলেন আকিব জাভেদও। সে খুবই রান কম দিয়েছে। বোলিংয়ে আমাকে দারুণ সহযোগিতা করেছে। মুশতাক আহমেদের স্পিনেও দারুণ বাউন্স ছিল। শেষ পর্যন্ত আমি ১৮ উইকেট পেয়েছিলাম কঠোর পরিশ্রম ও ফিটনেসের কারণে। পুরো আসরে একদিনও মনে হয়নি আমি পরিশ্রান্ত। ইমরান খান অবিশ্বাস্যভাবে আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমি ফাইনালে দুইটা ম্যাজিক্যাল ডেলিভারি দিয়েছিলাম, যা বিশ্বকাপে আমার সেরা সাফল্য। আমি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পেরেছিলাম।
নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বল অনেক বেশি সুয়িং করে। যে কারণে ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে খেলা অনেক বেশি কঠিন হয়। আমি মনে করি, এবারের বিশ্বকাপে ডেল স্টেইন, মিচেল জনসন, টিম সাউদি, জেমস অ্যান্ডারসন ও মোহাম্মদ সামীর ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমি খুব খুশি হব, যদি এবারের বিশ্বকাপে পেসাররা ভালো করতে পারেন। কেউ পরামর্শ চাইলে আমার শরণাপন্ন হতে পারে, সবার জন্য আমার দরজা খোলা থাকবে সবসময়।