প্রযুক্তির জগতের কয়েকটি সেরা ধারণা আমাদের বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা অসংখ্য উদ্ভাবন আসতে এবং যেতে দেখেছি। আর যেসব উদ্ভাবন খুব বেশি সফল না হলেও- এক সময় বিক্ষিপ্তভাবে হারিয়ে গেছে। হয়তো তৎকালীন সময় এসব প্রযুক্তি একটু এগিয়েছিল। কিন্তু সেসব উদ্ভাবন বিশাল কোনো পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ফিলিপস ভিডিও ২০০০
আশির দশকের গোড়ার দিকে, ফিলিপস ভিডিও ২০০০ প্রযুক্তি এসেছিল। সে সময় এই প্রযুক্তি টেপ স্ট্যান্ডার্ড ভিডিও কমপ্যাক্ট ক্যাসেট বা VCC নামেও সর্বাধিক পরিচিত ছিল। যা ভিডিও বর্ধিত রেকর্ডিং, ইলেকট্রনিক বোতাম এবং দ্বি-পার্শ্বযুক্ত ক্যাসেটের মতো উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের জন্য আধুনিক এবং উচ্চাভিলাষী বিনোদনের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তবে এই প্রযুক্তির উৎপাদন ব্যয় ও নির্ভরযোগ্য সমস্যার কারণে এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। এক সময় ভিডিওটেপ ফরম্যাটে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিএইচএস সিস্টেমের কাছে হেরে বন্ধ হয়ে যায়।
ভিএইচএস এবং ভিসিআর প্লেয়ার
আজকাল সিনেমা দেখা আর বড় বিষয় নয়। কিন্তু নব্বই দশকে, কোনো স্ট্রিমিং পরিসেবা ছিল না। সে সময় সিনেমা দেখার একমাত্র উপায় বা মাধ্যম ছিল থিয়েটার। পাশাপাশি ছিল অডিও ক্যাসেটগুলোর মতো ভিডিও ক্যাসেট কেনা এবং তা কেবল একটি নির্দিষ্ট প্লেয়ারে চালানো। নাম VHS (ভিডিও হোম থিয়েটার) এবং ভিসিআর, ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার। এই প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে সে সময় টেলিভিশনে সিনেমা বা ভিডিও দেখা যেত। ১৯৭৬ সালে জাপানে প্রথম ভিএইচএস প্লেয়ার চালু হয়েছিল। এরপর ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়।
আলফা প্রসেসর
নব্বই দশকে, আলফা প্রসেসর ছিল গতির রাজা। ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট করপোরেশন (DEC) দ্বারা ডিজাইন করা এই চিপ সহজে ভারী কম্পিউটিং করতে পারত। ৬৪-বিট আর্কিটেকচারের হওয়ায়, এটি সে সময় এগিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের এই প্রযুক্তি বিস্তৃত বাজারে ব্যর্থ হয়। সমস্যাটি প্রযুক্তিগত নয়, ছিল কৌশলগত। কারণ, DEC কখনই আলফা প্রসেসরকে সাশ্রয়ী বা যথেষ্ট অ্যাক্সেসযোগ্য করেনি। ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও সীমিত সফটওয়্যার সুবিধা এবং বহুমুখী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি। ফলে ২০০০ সালের গোড়ায়- আলফা প্রসেসর তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে।
অসবোর্ন কম্পিউটার
১৯৮১ সালে, অসবোর্ন-১ বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল কম্পিউটার হিসেবে সমাদৃত। একটি অন্তর্নির্মিত স্ক্রিন এবং একটি পূর্ণ আকারের কিবোর্ডসহ অসবোর্ন-১ এমন এক কম্পিউটার যা বহন করা যেত। কেননা- এর আকার এবং ওজন ছিল একটি সেলাই মেশিনের সমতুল্য। তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্য এবং বান্ডেলড সফ্টওয়্যার প্যাকেজ হওয়ায় ব্যবসায়িক মহলে সাড়া ফেলে। যা হোক, অসবোর্ন-১ এর সাফল্য ক্ষণস্থায়ী হয়। কোম্পানি পরের মডেল, ‘অসবোর্ন এক্সিকিউটিভ’ ঘোষণা করলে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। যা ‘অসবোর্ন ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। ১৯৮৩ সালের দিকে অসবোর্ন কম্পিউটার করপোরেশন দেউলিয়া হয়ে যায়।
এল ক্যাসেট
সত্তর দশকের শেষে, সনি এল ক্যাসেট প্রবর্তন করে। সে সময় অডিও টেপের মাধ্যমে রিল-টু-রিল সর্বাধুনিক অডিও শোনা যেত। এল ক্যাসেটটি স্ট্যান্ডার্ড ক্যাসেটের চেয়ে বড় ছিল। ফলে এর বিস্তৃত টেপ এবং উচ্চ প্লে-ব্যাক গতি পেত। শব্দের মানও ছিল ভালো। এক সময় মনে হয়েছিল-এটি সংগীত শোনার বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। যা হোক, বাজার ছোট, আর পোর্টেবল অডিও সলিউশনের দিকে সরে যায় এবং ভোক্তারা ‘কমপ্যাক্ট ক্যাসেট’কে গ্রহণ করে। আশির দশকে ওয়াকম্যান এবং অন্যান্য পোর্টেবল অডিও প্লেয়ারের কারণে ‘এল ক্যাসেট’ নিঃশব্দেই হারিয়ে যায়।
পোর্টেবল সিডি প্লেয়ার
ডিস্কম্যান হলো- প্রথম পোর্টেবল সিডি প্লেয়ার। এটি একটি পোর্টেবল অডিও প্লেয়ার, যা কমপ্যাক্ট ডিস্ক চালাতে ব্যবহৃত হয়। প্রথম যে অডিও প্লেয়ারটি মুক্তি পেয়েছিল তার নাম- ডিস্কম্যান ডি-৫০ সোনি। ডিভাইসটি অনেকটা ওয়াকম্যানের মতো পোর্টেবল ফরম্যাটে কমপ্যাক্ট ডিস্ক চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে জাপানেও ডিস্কম্যান চালু করা হয়েছিল। যা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি প্রজন্মকে ক্যাসেট টেপ থেকে সিডিতে পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত করে। এটি তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় পেয়েছিল।
ফ্লপি ডিস্ক
কম্পিউটার দৃশ্যমান হওয়ার পর মানুষ তথ্য সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়। ১৯৭২ সালে, IBM শুধুমাত্র পঠনযোগ্য চৌম্বকীয় স্টোরেজ প্রদানের উপায় হিসেবে ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভ তৈরি করে। ডিস্কটি মোটামুটি আট ইঞ্চি; যা হোক, এই সংস্করণটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এটি ফ্ল্যাশ মেমরি বা ইউএসবি ড্রাইভ হিসেবে সিলিকন-ভিত্তিক স্টোরেজ বা ফ্ল্যাশ মেমরিকে পথ দেখিয়ে ছিল। ফ্লপি কেবলমাত্র অল্প পরিমাণে তথ্য ধারণ করতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ডেটা ‘বিবর্ণ’ও ছিল, ভারী এবং যথাযথ সংরক্ষণাগারের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত নয়।
ডায়াল আপ মডেম
আজকাল WiFi এবং মোবাইল পরিষেবা প্রদান করে ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ প্রদান করে। সেই দিনগুলোতে, ডায়াল-আপ মডেম মানুষকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস দিত। এই ডিভাইস যা কম্পিউটারকে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযোগ করত। তবে সংযোগকালীন লোকেরা ভয়েস কল করতে পারত না। এটিকে প্রতিস্থাপনে উন্নত ডিজিটাল সিগন্যালিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ডায়াল-আপের ১০০ গুণেরও বেশি গতি অর্জন করে। ফলে ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য একই ফোন লাইন ব্যবহার করতে দেয়।
তথ্যসূত্র : ডন