চট্টগ্রাম মহানগরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ব্যয় ছাড়িয়ে গেছে ১৩০০ কোটি। এমন প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিকে দুর্নীতির মহোৎসবের সঙ্গে তুলনা করছে সচেতন সমাজ।
জলাবদ্ধতা নিরসনে এক দশক আগে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এক দশকে চসিক দেখেছে তিন মেয়র এবং দুই প্রশাসক। এ পাঁচ শীর্ষ কর্তার কেউ শেষ করতে পারেননি এ খাল খননের কাজ। উল্টো দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্প ব্যয়। ২৮৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি ৪৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা! অস্বাভাবিক প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে অর্থ সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। পরে যখন কাজ শুরু হয়েছে, তখন ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প শেষ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপদেষ্টাও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির বলেন, ‘একটি প্রকল্পের ব্যয় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হলে কোনোভাবে মানা যায়। যখন ৪৫০ শতাংশ বেড়ে যায় বুঝতে আর বাকি থাকে না কীভাবে ব্যয় বৃদ্ধির নামে লুটপাট হয়েছে। অস্বাভাবিক প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের বহদ্দারহাট ও আশপাশ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে তৎকালীন সিটি মেয়র মনজুর আলম বারইপাড়া খাল খননের উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালের ২৪ জুন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল তিন বছর। পরে প্রথম দফায় ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের ৩০ জুন প্রকল্প ব্যয় এক লাফে হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বারবার প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও তিন মেয়রসহ চসিকের পাঁচ শীর্ষ কর্তার কেউ শেষ করতে পারেননি কাজ। কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ।